ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক উপায়

ডাক্তারবাড়ি প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৫, ১২:৪১ এএম

ডায়াবেটিস এখন বিশ্বব্যাপী অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশেও এ রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অধিকাংশ মানুষ জানেন না যে, ডায়াবেটিস শুধুই ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, বরং জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেও এটি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। প্রকৃতির কাছেই রয়েছে এমন কিছু সহজ ও নিরাপদ সমাধান, যা নিয়মিত চর্চা করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের দশটি প্রাকৃতিক উপায় তুলে ধরা হলো

হাঁটা ও ব্যায়াম

শরীরচর্চা হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর প্রাকৃতিক পদ্ধতি। প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা হাঁটা, সাইকেল চালানো বা যোগব্যায়াম করলে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম শুধু রক্তে শর্করাই নিয়ন্ত্রণ করে না, হৃদরোগ ও স্থূলতা থেকেও রক্ষা করে।

পর্যাপ্ত পানি পান

শরীরের কার্যক্রম ঠিক রাখতে পানির বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত পানি পান করলে রক্ত পাতলা হয় এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে সফট ড্রিঙ্ক, কোলা বা মিষ্টি জুস থেকে দূরে থাকতে হবে।

শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার

প্রাকৃতিক খাদ্যের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হলো শাকসবজি। করলা, পালং, লাউ, পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়ার মতো সবজি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া ডাল, ওটস, ব্রাউন রাইস বা পূর্ণ শস্যজাত খাবারও শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। আঁশযুক্ত খাবার হজম হতে সময় নেয়, ফলে শর্করা ধীরে ধীরে রক্তে প্রবেশ করে।

ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপাদান

প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

করলা: এর রস বা তরকারি রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়।

মথি দানা: রাতে ভিজিয়ে সকালে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

কালোজিরা: নিয়মিত অল্প পরিমাণে খেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে।

তুলসী পাতা: খালি পেটে কয়েকটি পাতা খেলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

এসব ভেষজ প্রাকৃতিকভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

চাপ বা স্ট্রেস ডায়াবেটিসের বড় শত্রু। মানসিক চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল হরমোন বাড়ে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ধ্যান, প্রার্থনা, গান শোনা বা শখের কাজে সময় দিলে চাপ কমে। প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন, এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর প্রাকৃতিক উপায়।

পর্যাপ্ত ঘুম

প্রকৃতির অন্যতম উপহার হলো ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, ফলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুমানো উচিত। রাত জাগা এবং দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে।

ফলের সঠিক ব্যবহার

ফল খাওয়া স্বাস্থ্যকর হলেও সব ফল ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপযোগী নয়। কলা, আম, আঙুরের মতো মিষ্টি ফল সীমিত পরিমাণে খেতে হবে। এর পরিবর্তে পেয়ারা, জাম, কমলা, আপেলের মতো আঁশযুক্ত ও কম মিষ্টি ফল খাওয়া নিরাপদ। ফল সবসময় টাটকা অবস্থায় খাওয়া ভালো।

প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা

ফাস্টফুড, সফট ড্রিঙ্ক, বেকারি আইটেম, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবারÑএসব ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে ঘরোয়া রান্না, ফলমূল ও শাকসবজি বেছে নিতে হবে। যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক ও অপরিষ্কৃত খাবার খেলে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। ওজন কমানোর জন্য ডায়েটের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন। প্রতিদিন হাঁটা, পর্যাপ্ত পানি পান এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার মাধ্যমে স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখা সম্ভব। মাত্র ৫Ñ১০% ওজন কমলেও রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকাংশে কমে যায়।

নিয়মিত পরীক্ষা

ডায়াবেটিস প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা জরুরি। এতে নিজের অবস্থা বোঝা সহজ হয় এবং প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ছাড়া চোখ, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের নিয়মিত পরীক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা পুরোপুরি সারানো না গেলেও প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। প্রকৃতির উপহারÑশাকসবজি, ফল, ভেষজ ও সঠিক জীবনযাপনই হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ সমাধান। তবে মনে রাখতে হবে, এসব প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। সচেতনতা ও নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুললে একজন ডায়াবেটিস রোগীও সুস্থ, কর্মক্ষম ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।