হাঁটু আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল একটি সন্ধি (লড়রহঃ)। তরুণ থেকে বয়স্কপ্রায় সব বয়সের মানুষই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। হাঁটা, দৌড়ানো, বসা, উঠাসহ প্রতিদিনের নানা কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার, বয়সজনিত ক্ষয়, আঘাত কিংবা আর্থ্রাইটিসের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হওয়া এখন খুবই সাধারণ একটি সমস্যা।
এই ব্যথা থেকে মুক্তির অন্যতম কার্যকর ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন উপায় হলো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। নিয়মিত ব্যায়াম, থেরাপিউটিক মুভমেন্ট এবং উপযুক্ত শারীরিক থেরাপির মাধ্যমে হাঁটুর ব্যথা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
হাঁটু ব্যথার সাধারণ কারণসমূহ:
- অস্টিওআর্থ্রাইটিস (ঙংঃবড়ধৎঃযৎরঃরং): বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয়জনিত ব্যথা
- প্যাটেলোফেমোরাল পেইন সিনড্রোমÑ হাঁটার সময় হাঁটুর সামনের অংশে ব্যথা
- লিগামেন্ট ইনজুরি (অঈখ/গঈখ ঃবধৎ)Ñ খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশি দেখা যায়
- ম্যানিসকাস ইনজুরিÑ হাঁটুর কার্টিলেজ ক্ষতি
- ওভারওয়েটÑ অতিরিক্ত ওজন হাঁটুর
- ওপর চাপ বাড়ায়
গাঁটে বাত (জযবঁসধঃড়রফ অৎঃযৎরঃরং): এটি একটি অটোইমিউন রোগ যা হাঁটুসহ দেহের বিভিন্ন গাঁটে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
অসঠিক ভঙ্গিতে বসা বা হাঁটা: দীর্ঘ সময় বসে থাকা, বসে কাজ করা বা হাঁটার সময় ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করলেও হাঁটুতে ব্যথা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা আমাদের গৃহস্থালিতে কাজ করা মা, চাচিদের বেশি দেখা দেয়।
কখন ফিজিওথেরাপি পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
- হাঁটু ফুলে গেছে বা লাল হয়ে গেছে।
- ব্যথার কারণে হাঁটাচলা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
- ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
- কয়েক সপ্তাহ ধরে একই ব্যথা থাকছে।
ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে করণীয়:
ব্যায়াম (ঝঃৎবহমঃযবহরহম ঊীবৎপরংবং):
- ক্যুয়াড্রিসেপ সেটিংস: সোজা পা বিছানায় রেখে হাঁটু চেপে ধরা।
- স্ট্রেট লেগ রেইজ (ঝখজ): সোজা পা উপরে তোলা।
- হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ: উরুর পেছনের পেশি টান দিয়ে স্ট্রেচ করা।
ম্যানুয়াল থেরাপি:
ফিজিওথেরাপিস্ট হাতে করে জয়েন্ট মোবিলাইজেশন করেন যা রক্ত সঞ্চালন ও জয়েন্ট ফাংশন উন্নত করে।
হট ও কোল্ড থেরাপি:
ঠান্ডা সেঁক (ঈড়ষফ চধপশ): ইনফ্লামেশন কমায়।
গরম সেঁক (ঐড়ঃ চধপশ): ব্যথা ও পেশি টান কমায়।
ইলেক্টোথেরাপি:
ঞঊঘঝ থেরাপি: ঞঊঘঝ (ঞৎধহংপঁঃধহবড়ঁং ঊষবপঃৎরপধষ ঘবৎাব ঝঃরসঁষধঃরড়হ) মেশিনের মাধ্যমে ব্যথা কমানোর জন্য হালকা বৈদ্যুতিক সিগনাল ব্যবহার করা হয়।
আল্ট্রা সাউন্ড থেরাপি: হাঁটুর মাংশপেশির স্পাজম কমায় এবং রক্ত চলাচলে সহযগিতা করে।
ব্যথা নিরাময়ে কিছু পরামর্শ
- লম্বা সময় বসে না থাকা।
- ভারী কাজ বা অতিরিক্ত হাঁটা এড়িয়ে চলা।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- হাঁটুর জন্য সাপোর্টিভ জুতা ব্যবহার করা।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি: খাদ্যতালিকায় দুধ, ডিম, সূর্যের আলোÑএই উপাদানগুলো হাড়কে মজবুত রাখে।
- ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করা।
- ব্যথা বাড়ার আগে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন এবং আপনার হাঁটুকে দিন সঠিক যতœ।
- হাঁটু ব্যথা মানেই জীবন থেমে যাবে না। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আপনি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
ফিজিওথেরাপিস্ট
চেম্বার: আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার,
মিরপুর-৬, ঢাকা।

