রবিবার, ১১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৬:৪৯ এএম

একটি শব্দ, অগণিত অনুভব / যার স্নেহে জেগে ওঠে ভোর 

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৬:৪৯ এএম

একটি শব্দ, অগণিত অনুভব / যার স্নেহে জেগে ওঠে ভোর 

ছবি - রূপালী বাংলাদেশ

চার দেয়ালের গণ্ডি থেকে পৃথিবীর পথে, শূন্য হাতে বিশ্ব জয় করা এক গভীর বিস্ময়ের নাম ‘মা’। যিনি শুধুই একজন মানুষ নন, সন্তানের জীবনের প্রথম আশ্রয়, প্রথম শিক্ষাগুরু এবং নিরন্তর সহযাত্রী। যার অসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা শির তুলে দাঁড়াতে পারি আমিত্বের উচ্চ শিখরে। তাই তার মমতা আর ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় আন্তর্জাতিক ‘মা দিবস’। যদিও মায়ের প্রতি ভালোবাসা কোনো নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ নয়, তবে এই দিনটি পৃথিবীজুড়ে মায়েদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি বিশেষ সুযোগ। মা দিবসের ইতিহাস আজকের নয়। ধারণা করা হয়, প্রাচীন গ্রিস ও রোমে মাতৃদেবীকে সম্মান জানিয়ে উৎসব করা হতো। আবার প্রাচীন ইংল্যান্ডে খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকে ‘মাদারিং সানডে’ পালিত হতো, যা ছিল এক ধরনের ধর্মীয় উৎসব। তবে আধুনিক মা দিবসের মূল সূচনা হয় যুক্তরাষ্ট্রে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। এই দিবসের পেছনে যার নাম অম্লান হয়ে আছে, তিনি হলেন আনা জার্ভিস। ১৯০৫ সালে তার মা অ্যান রিভস জার্ভিস মারা যাওয়ার পর আনা তার স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে একটি দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। অ্যান রিভস ছিলেন একজন সমাজকর্মী, যিনি আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় মায়েদের সংগঠিত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করেছিলেন। তার দেখানো পথেই আনা জার্ভিস মায়েদের সামাজিক ভূমিকা ও অবদানের স্বীকৃতি দিতে ১৯০৮ সালে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরের এক গির্জায় মা দিবস উদযাপন করেন। এরপর আনা জার্ভিস জনসমর্থন সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি চিঠি লিখতেন, সভা করতেন এবং প্রেসে প্রচারণা চালাতেন। এইভাবে তার নিরলস প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় ‘মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেন। ধীরে ধীরে এই দিনটি ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশেও। তবে আনা জার্ভিস পরে এই দিবসের বাণিজ্যিকীকরণে ব্যথিত হন। তার ইচ্ছা ছিল মা দিবস হোক মায়েদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন। কিন্তু পরে দেখা যায়, এটি ফুল, কার্ড আর উপহারের বাজারে রূপ নেয়। যার জন্য জীবনের শেষদিকে এই বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে তার আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য অনেক আগে থেকেই মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রোববারকে বেছে নিয়েছিলেন। ষোড়শ শতকে এটি ইংল্যান্ডে মাদারিং সানডে বলে পরিচিতি লাভ করে।

অনেকেই ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে লেতারে সানডে, যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রোববারে পালন করতে শুরু করে। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, জুলিয়া ওয়ার্ড হাও রচিত ‘মাদার্স ডে প্রক্লামেশন’ বা ‘মা দিবসের ঘোষণাপত্র’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের  পৈশাচিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিজ জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর আনা মেরি জার্ভিস মায়ের শান্তি কামনায় ও তার সম্মানে সরকারিভাবে মা দিবস পালনের জন্য প্রচারণা চালান। তিন বছর পর ১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালন হয়। এরপর ১৯১২ সালে এই দিবসটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই প্রতিটি দেশে মায়েদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়। দেশে দেশে পালন করা হয় বিশ্ব মা দিবস। তবে বাংলাদেশে মা দিবসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে ২০০০ সালের পর থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রচার, গণমাধ্যমের উদ্যোগ এবং তরুণ প্রজন্মের উৎসাহে এই দিনটি এক বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এই দিন অনেক সন্তান তাদের মায়ের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে বিশেষ উপহার দেন এবং একসঙ্গে ভালো সময় কাটান, যা কর্মব্যস্ত জীবনে কমই ঘটে। তবে শুধু ভালোবাসা জানালেই মায়ের প্রতি দায়িত্ব শেষ হয় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ইইঝ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি নারী এখনো অবৈতনিক গৃহস্থালি শ্রমে নিযুক্ত, যার কোনো অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই। বহু নারী মা হওয়ার পর পেশাগত জীবন থেকে ছিটকে পড়েন। শহরাঞ্চলেও কর্মজীবী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত ডে-কেয়ার, মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এখনো সীমিত। এই প্রেক্ষাপটে মা দিবস শুধু আবেগের দিন নয়, এটি হতে পারে মায়েদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেতনতার দিন। তাই মায়েদের প্রতি আমাদের আচরণ হোক সম্মান, সহানুভূতি ও সমর্থনের অনুশীলন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!