রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৫:৩৬ এএম

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী  পাঠদানে গতি ফেরাতে ৫ উদ্যোগ

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৫:৩৬ এএম

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী  পাঠদানে গতি ফেরাতে ৫ উদ্যোগ

ছবি - রূপালী বাংলাদেশ

দেশের পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় পাঠদান কার্যক্রমে গতি ফেরাতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঁচটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করা হচ্ছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ভাষাভিত্তিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ; ক্লাস রুটিনে ভাষাভিত্তিক পাঠদান অন্তর্ভুক্ত করা; শিক্ষক প্রশিক্ষণ; শিখনকালীন মূল্যায়ন ও সরকারিভাবে পাঠদান কার্যক্রমে নজরদারি জোরদার করা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি আগামীতে আরও চার ভাষার নৃগোষ্ঠীর একই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ভাষা শিক্ষার উন্নয়নে ‘ভাষা অলিম্পিয়াড’ চালুরও চিন্তা রয়েছে সরকারের। 


পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার উন্নয়নে গত ৩০ এপ্রিল একটি কর্মশালার আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঠ্যপুস্তক : প্রণয়ন, বিতরণ ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক কর্মশালায় শিক্ষার উন্নয়নে এই পাঁচ সুপারিশের তথ্য উঠে আসে। পাঁচটির মধ্যে চারটি সুপারিশই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছেন কর্মশালায় অংশ নেওয়া সবাই। পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমে গতি বাড়ার পাশাপাশি ভাষা সংরক্ষণও নিশ্চিত হবে। 


কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া কর্মশালায় তথ্যজ্ঞ এনসিটিবি, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।   


দেশের পাঁচ ভাষার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উল্লেখিত শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিগত ৯ বছর ধরে বিনা মূল্যে এনসিটিবির বই পাচ্ছে। তবে নানা সংকটে প্রথম থেকেই এসব শিক্ষার্থীকে নিজ ভাষায় পাঠদান সম্ভব হচ্ছিল না। একপর্যায়ে পুরো পাঠদান কার্যক্রমেই স্থবিরতা তৈরি হয়। এর ফলে বই দেওয়ার মাধ্যমে মাতৃভাষায় পাঠদান ও ভাষা সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে রূপালী বাংলাদেশে ইতিপূর্বে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। সরকারের তরফেও বিষয়টি আলোচনা হওয়ায় এখন সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


তিন পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছিলেন, প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যের এসব বই সংগ্রহ করা হলেও ব্যবহার হয় না বললেই চলে। ব্যতিক্রম হলেও দু-একটি স্কুল বই নেওয়ার জন্য চাহিদা দেওয়ারও আগ্রহ পায় না। চাহিদা অনুযায়ী আনা বই স্কুলের অফিসরুমেই থেকে যায়। অনেক স্কুলেই এসব ভাষা পড়ানোর মতো প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। আবার যেসব স্কুলে নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক রয়েছেন, তারা কথা বলতে পারলেও বর্ণমালা পড়তে ও লিখতে পারেন না। শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরাও যেহেতু পড়তে ও লিখতে পারেন না, তাই বাসায় বই নেওয়ারও কোনো আগ্রহ থাকে না। এ ছাড়া একটি ক্লাসে একাধিক ভাষার নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী থাকলে তাদের কীভাবে পড়ানো হবেÑ এসব নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এসব নানা সমস্যায় মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো বাংলা বই দিয়ে পড়াশোনা করছে।


বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামটি জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছিলেন, ওদের শিক্ষা কারিকুলামে খুব বেশি এমফেসিস  (জোর) দেওয়া হয়নি। জন্মগত কারণে ওরা ভাষাটি শুনে অভ্যস্ত। ভাষাটি বোঝে এবং কথাও বলতে পারে। কিন্তু বর্ণমালা না চেনার কারণে পড়তে পারে না, লিখতে পারে না। এমনকি নৃগোষ্ঠীর শিক্ষকেরাও এটি পারেন না। তারা আরও বলেন, স্কুলগুলো রুটিন অনুসরণ করেই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করলেও রুটিনের মধ্যে নৃগোষ্ঠীর ভাষার বইগুলো পাঠদানের জন্য কোনো সময় বরাদ্দ নেই। সংকট কাটাতে ব্যাপক আকারে শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদেরও মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য আরও সচেতন করে তুলতে গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করেন এসব কর্মকর্তা। এনসিটিবির কর্মশালা থেকে যে পাঁচ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে এই সংকট কাটবে বলে আশাবাদী শিক্ষা কর্মকর্তারা।


এনসিটিবির কর্মশালায় নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থদের ভাষার মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে শিক্ষক নিয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এসব শিক্ষককে পাহাড় ও সমতলের নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য নিয়োগ করা হবে। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে ক্লাস রুটিনে নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য কোনো সময় নেই। এ ক্ষেত্রে পাহাড় ও সমতলের নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত স্কুলগুলোর ক্লাস রুটিনে থাকা বিষয়গুলো থেকে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট সময় বের করে ৩০ মিনিটের একটি ক্লাস অন্তর্ভুক্তের পরিকল্পনা করা হয়। তৃতীয়ত, শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট ভাষায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়। 


চতুর্থত, কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা নিজ ভাষায় কতটুকু দক্ষতা অর্জন করেছে, তা জানতে এক বা একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। পঞ্চমত, জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে নৃগোষ্ঠীর পাঠদান কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এসব পরিকল্পনা ছাড়াও পড়াশোনার বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাষা অলিম্পিয়াডের ব্যবস্থা করলে সুফল পাওয়া যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে উল্লেখিত পাঁচ ভাষার বাইরে সাঁওতাল, মনিপুরি, তঞ্চ্যঙ্গা ও ম্রো নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই দেওয়ার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সুপারিশ করা হয়।  


আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই পাঁচ উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব বলে রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে এনসিটিবি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছে। তারপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে এ বিষয়ে সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!