ঢাকা রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

মেয়রের শপথ ইস্যুর সমাধান চান ইশরাক

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৫, ০৯:৩০ এএম
ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের বিষয়ে সরকারকে দোষারোপ করছেন না জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে সমাধান চাইছেন তিনি।

শপথ গ্রহণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন জানিয়ে ইশরাক বলেন, শপথ গ্রহণ বিলম্বিত হচ্ছে, এ জন্য আমি কোনো রাজনৈতিক দল, কোনো ব্যক্তি, এমনকি সরকারকেও দোষারোপ করছি না। আমরা এটার সমাধান চাইছি। আমাদের মনে হচ্ছে, ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি এখানে বৈষম্য করা হচ্ছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, নগর ভবনের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সব ভোটার, যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি যতটুকু জেনেছি, এই আন্দোলন লাগাতার চলবে, যতক্ষণ না দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। সর্বস্তরের জনগণ এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই আন্দোলনে যোগ দেবে বলে আমি জানতে পেরেছি। 
নগর ভবনের ভেতরে বা বাইরে কারা তালা দিয়েছে এ বিষয়ে কোনো ধারণা নেই বলে জানান ইশরাক। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি বলতেও পারব না। এখানে হাজার হাজার লোক যোগদান করেছেন। তারা হয়তো তাদের ক্ষোভ থেকে এ কাজটা করেছেন। আমি এ বিষয়ে কোনো নির্দেশ দিইনি। আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাসী।

ইশরাক আরও বলেন, নগর ভবনে যারা আন্দোলন করছে তাদের আমি বলব, অবশ্যই তারা যাতে এমন কিছু না করেন, যাতে জনদুর্ভোগ তৈরি না হয়। তবে তাদের আন্দোলন করার অধিকারকেও আমি না করতে পারি না। সবখানে যেহেতু আন্দোলন হচ্ছে, এখন তারা যদি আন্দোলন করতে চায়, কীভাবে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায়, সে প্রশ্ন তোলেন ইশরাক।

এর আগে গতকাল ডিএসসিসির নগর ভবনের সামনে দুপুর ১২টায় টানা তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা। অবস্থান কর্মসূচি থেকে তারা ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসি মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

এ সময় বিক্ষুব্ধরা নগর ভবনের বিভিন্ন কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। যার কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে আসতে পারেননি। এতে নগর ভবনের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় নগর ভবনের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ছোট গেট দিয়ে ভেতরে যাওয়া-আসা ছিল। দুপুর ১টা পর্যন্ত নগর ভবনের সামনে অবস্থান করেন ইশরাকের সমর্থকরা।

ডিএসসিসির নগর ভবনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অস্থায়ী দপ্তর। এখানেই দাপ্তরিক কাজ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে ইশরাক অনুসারীদের টানা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবনে যাননি আসিফ।

স্থানীয় সরকার বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, স্যার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা। সে কারণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে ওনার অফিস আছে। আপাতত সেখানে বসছেন তিনি।

এরও আগে বেলা ১১টার দিকে নগর ভবন থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল গোলাপশাহ মাজার, জিপিও হয়ে পল্টনের দিকে এগোতে থাকে। জিপিও মোড় থেকে সচিবালয়ের দিকে প্রবেশের পথে পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়ায় বিক্ষোভকারীরা পল্টন হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে আসেন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর বিক্ষোভকারীরা আবার নগর ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ চেয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।  নগর ভবনের প্রধান ফটকে দেওয়া বক্তব্যে সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, আসিফ মাহমুদকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। তাকে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিহত করা হবে।

ইশরাক হোসেনকে ডিসিসির মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত বুধবার ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে নগর ভবন প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে কয়েকশ মানুষ।  পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণাও দেওয়া হয় সেদিন।

প্রসংগত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়।  বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন। অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম মেয়র পদে তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন।

এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাকের শপথের আয়োজন এখনো হয়নি, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আন্দোলনকারীরা।