মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘কাউন্টার সেটিং’ নামে পরিচিত একধরনের অবৈধ প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে বিদেশিদের সহজে ইমিগ্রেশন পার করিয়ে দিত দুইজন বাংলাদেশি। টার্মিনাল ওয়ানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে সেই দুই বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি)। আটককৃতদের একজন একটি পর্যটন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বলে জানা গেছে। মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম দ্য সান জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে নেগেরি সেমবিলান ও কুয়ালালামপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।খবরে বলা হয়েছে, এই দুই ব্যক্তি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-১-এ দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে বিদেশিদের অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করাতে সহায়তা করছিলেন। তারা একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার (১৬ জুলাই) পুত্রজায়া ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জ্যেষ্ঠ রেজিস্ট্রার শাইখ জুলাদ্রুস মারিকান তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন, যা আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এদিকে, যোগাযোগ করা হলে এমএসিসি-এর গোয়েন্দা বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক দাতুক সাইফুল এজরাল আরিফিন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলাটি এমএসিসি আইন ২০০৯-এর ধারা ১৬(বি)-এর অধীনে তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরের সেরিকামবাগানের পুত্রা পারমাই সেলেসা অ্যাপার্টমেন্ট। সেই অ্যাপার্টমেন্টে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক যৌথ অভিযানে বাংলাদেশিসহ ৪৯৪ জন বিদেশিকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। অভিযান চলাকালে মোট ৭৪১ জন বিদেশিকে যাচাই-বাছাই করা হয়। গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাত ১০টায় সমন্বিত অভিযানটি মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট (জিম) সেলাঙ্গর কুয়ালালামপুর জিম, জেনারেল অপারেশনস ফোর্স (পিজিএ), সুবাং জায়া সিটি কাউন্সিল (এমবিএসজে), ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট জেপিএন) এবং মালয়েশিয়ান সিভিল ডিফেন্স ফোর্স (এপিএম) এর সহযোগিতায় পরিচালনা করে। ইমিগ্রেশনের উপ-মহাপরিচালক (অপারেশনস) জাফরি এমবক তাহা এক বিবৃতিতে বলেন, অভিযানের সময় মোট ৭৪১ জন বিদেশিকে তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে কোনো পরিচয়পত্র না থাকা, পাশের শর্ত লঙ্ঘন করা, ওভারটাইম থাকা, অচেনা কার্ডধারী এবং অন্যান্য অপরাধে ৩৫৭ জন পুরুষ, ১০৭ মহিলা এবং ৩২ জন শিশুসহ ৪৯৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, আটকদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ান, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ান নাগরিক রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই সেলাঙ্গর পাইকারি বাজারে, কাছাকাছি প্রাঙ্গণে, নির্মাণ খাতে এবং গৃহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করত। জাফরি আরও বলেন, এই স্থানটি সেলাঙ্গরে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য একটি হটস্পট। সময়ে সময়ে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। জাফরি বলেন, অভিবাসন আইন ১৯৫৯/৬৩, পাসপোর্ট আইন ১৯৬৬ এবং অভিবাসন বিধিমালা ১৯৬৩ এবং ব্যক্তি পাচার বিরোধী এবং অভিবাসী চোরাচালান বিরোধী আইন ২০০৭ এর মতো জাতীয় আইনের বিধান লঙ্ঘনকারী বিদেশী নাগরিকদের শনাক্ত, গ্রেফতার, বিচার এবং বহিষ্কার করার জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগকারী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ইমিগ্রেশন বিভাগ জনসাধারণ এবং নিয়োগকর্তাদের অবৈধ অভিবাসীদের সুরক্ষা না দেওয়ার জন্য বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মুখোমুখি না হয়ে জনসাধারণকে এগিয়ে এসে ইমিগ্রেশন বিভাগের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অবৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। জাফরি জানান, ১৯ মে, ২০২৫ থেকে ৩০ এপ্রিল, ২০২৬ পর্যন্ত, ইমিগ্রেশন বিভাগ অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ২.০ বাস্তবায়ন করেছে যেখানে বিদেশিরা ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা এবং ২০ রিঙ্গিতের একটি বিশেষ পাশ নিয়ে অবৈধ অভিবাসীরা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন।
আপনার মতামত লিখুন :