সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ০৩:৪৫ এএম

না ফেরার দেশে বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ০৩:৪৫ এএম

না ফেরার দেশে বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান

চিরনিন্দ্রায় পাড়ি জমালেন দেশের প্রথিতযশা ভাস্কর একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান। গতকাল রোববার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। হামিদুজ্জামান খান ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী ভাস্কর আইভি জামান, দুই পুত্র ও দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

হামিদুজ্জামান খানের স্ত্রী ও চিত্রশিল্পী আইভি জামান জানান, গত ১৭ জুলাই তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পর গতকাল সকালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ সোমবার বাদ যোহর কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল বেলা আড়াইটায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আনা হয়। সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং আর্ট গ্যালারি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়াত এ শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার জানাজা হয়। 

হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চারুকলা অনুষদ) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। পাঠ পর্ব শেষে তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। অধ্যাপক হিসেবে ২০১২ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকে স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা করে গেছেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা হামিদুজ্জামানকে আটক করলেও পরে তিনি ছাড়া পান। ২৭ মার্চ ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় তিনি অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের নৃশংসতা এবং মানুষের অভাবনীয় দুর্দশা তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। সে কারণে স্বাধীনতার পর প্রথম দুই দশকে তার অধিকাংশ ভাস্কর্যের বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭২ সালে ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে তিনি ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নির্মাণে কাজ করেন। জয়দেবপুর চৌরাস্তায় এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য।

এরপর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অধিকাংশ ভাস্কর্যই তার হাতে করা। নভেরা আহমেদের পরে যাদের হাতে দেশের আধুনিক ভাস্কর্য চর্চা বিকাশ লাভ করেছে তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম প্রধান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সার কারখানায় ‘জাগ্রত বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘ফ্রিডম’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, মাদারীপুরে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ হামিদুজ্জামান খানের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য।

ভাস্কর্য হামিদুজ্জামান খানের প্রধান শিল্পমাধ্যম হলেও তিনি জলরঙের ছবিতেও বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তার জলরঙের নিসর্গ, মানব মানবীর মুখাবয়ব ও নিরীক্ষাধর্মী কাজগুলো বিদগ্ধ মহলে খুবই সমাদৃত হয়েছে। এ ছাড়াও তেলরং, অ্যাক্রিলিক, স্কেচ মাধ্যমে সমানতালে কাজ করেছেন। যুক্তিযুদ্ধের পর ভাস্কর্যে তার প্রিয় বিষয় ছিল পাখি। ঢাকার বুকে ব্রোঞ্জ ও ইস্পাতের তৈরি বেশকিছু পাখি তার শিল্পী সত্তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। দেশ-বিদেশে তার ভাস্কর্য ও চিত্রকলার প্রায় অর্ধশত একক ও বহু যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে।

হামিদুজ্জামান খান বিভিন্ন মাধ্যম ও ফর্ম নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী কাজে আগ্রহী ছিলেন। তিনি ধাতু, কাঠ, সিরামিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিরীক্ষাধর্মী অনেক ভাস্কর্য রচনা করেছেন। একটা পর্যায়ে ধাতব মাধ্যমে পাখির ভাস্কর্য সৃজনে মনোযোগী হয়েছিলেন। টিএসসি চত্বরে ধাতব মধ্যমে করা ‘শান্তির পায়রা’সহ পাখি নিয়ে তার অনেক ভাস্কর্য রয়েছে।
হামিদুজ্জামান খান ২০০৬ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক পান। তিনি বাংলা একাডেমি ফেলো ছিলেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!