গরিবের আহার মোটা চাল ও আলু। ভোক্তা চাহিদার শীর্ষে থাকা এই দুটি পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে গত ১ বছরে ঢাকায় সর্বাধিক বেড়েছে চালের দাম; প্রতি বস্তায় প্রায় ১১০০ টাকা। দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়েও কোনো কাজে আসছে না।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর মূল্য। একই সঙ্গে আকাশ ছুঁয়েছে ইলিশের দাম। পাশাপাশি কমেছে সবজি ও মুরগির দাম।
বাজার ঘুরে জানা যায়, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বসুন্ধরা, টিকে এবং আকিজ গ্রুপকে ভোগ্যপণ্য মজুদ ও বিপণন অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে চালের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। অন্যদিকে, ঢাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় বেশির ভাগ সবজি, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমায় স্বস্তি প্রকাশ করেন ভোক্তা।
তবে প্রধান ভোগ্যপণ্য হিসেবে চালের দাম ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার গত বছর থেকে আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের শুল্কপ্রত্যাহার করে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ধাপে ধাপে শুল্ক প্রত্যাহার করেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। অন্যদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আরও চাল আমদানির কথা বলছে, কিন্তু সুফল মিলছে না।
চালের দাম সম্পর্কে ঢাকার কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির এম এ আউয়াল তালুকদার বলেন, ‘দাম বেড়েছে বস্তায় অন্তত ১ হাজার টাকা। করপোরেট কোম্পানিগুলো বোরো মৌসুমে ধান মজুত শেষ করেছে। মিলারদের হাতে আগের মতো ধান-চাল নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে সরকার ভোগ্যপণ্যের বাজারে ব্যবসার অনুমোদন দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ করেছে। এখন চালের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই। আগের মিলাররা কেজিতে দু-এক টাকা দাম বাড়াত। আর করপোরেট কোম্পানি দাম বাড়ায় কেজিতে ৬-৮ টাকা।’
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বাজারে এক কেজি পোলাওয়ের চাল আমরা বিক্রি করি ৮০ টাকা। আর করপোরেট কোম্পানি বিক্রি করে ১৪০ টাকায়। সরকার সুযোগ করে দিয়ে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’
কিচেন মার্কেটের বাহার ট্রেডের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘আর পাইজাম চাল নেই। সরু চালের কেজি এখন ৮০ টাকা। তবে একটু ভালো মানের চিকন চালের বস্তা (৫০ কেজি) এখন ৪ হাজার টাকা। গত বছরে এটা ২৯শ থেকে ৩১০০ টাকায় বিক্রি করতাম। বছরে বস্তায় বেড়েছে প্রায় ১১০০ টাকা।’
ঢাকার অধিকাংশ বাজারে সাগর, ডায়মন্ড, রশিদ, মোজাম্মেলসহ বিভিন্ন প্রকারের চাল রয়েছে। প্রকার এবং স্থানভেদে এসব চালের দাম বাড়ে এবং কমে। তবে কমার চেয়ে বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে এসব চালের দাম।
কিচেন মার্কেটের মতলব রাইস এজেন্সির মালিক বলেন, ‘আগে করপোরেট কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। মিলাররা সরকারের কথা মানতেন এবং খুব বেশি চালের দাম বাড়াতেন না। এখন করপোরেটকে ধরার কৌশল করতে হবে। চাল আমদানি করে, শুল্ক ছাড় দিয়ে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।’
বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে হামিদ স্টোরের তরুণ মুরাদ জানান, ‘সরকারি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করি। সরবরাহে ঘাটতিও নাই, ক্রেতাও কম।’ বাজারে আলুর দাম বেড়ে এখন প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। কমেছে কাঁচা মরিচের দামও।
বর্ষায় দেশের বিভিন্ন বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়ে। তবে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ঢাকার বাজারেও মিলছে ইলিশ। যা মিলছে তার প্রতি কেজি অন্তত ২ হাজার টাকা; অর্থাৎ প্রতি গ্রাম ২ টাকা। এক কেজি একটি ইলিশের দাম কারওয়ান বাজারে ২২০০ টাকা হাঁকিয়েছেন বিক্রেতা। পুরোনো বিজিএমইএ ভবনের সামনে বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কেজি মাপের একটি ইলিশের দাম ২২০০ টাকা। তবে দুই হাজারের নিচে রাখা যাবে না। ১৬০০ গ্রাম এই ইলিশের দাম ৩২০০ টাকা’ বলে জানান এই বিক্রেতা।
এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার খাসির মাংস ১১০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। আগের চেয়ে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। সাদা ডিমের ডজন ১১০ এবং লাল ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। তার মধ্যে পাবনার পেঁয়াজের দাম একটু বেশি।
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। এমন তথ্য প্রকাশ করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তথ্য বলছেÑ রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। তবে তা খুচরা পর্যায়ে ২৮-৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
কিচেন মার্কেটের পশ্চিমের অংশে মুরগির মাংস ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্রয়লারের দাম আরও কমেছে। গত সপ্তাহ থেকে আরো ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সোনালি মুরগীর দাম আরো কমেছে। এখন প্রতি কেজি ২৭০-২৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারে গতকাল দেখা গেছে, গেল সপ্তাহের তুলনায় খুচরা বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। দাম বেশি কমার তালিকায় আছে বরবটি, বেগুন, কাঁকরোল ও করলা। বাজারে প্রতি কেজি পটোল আগের দামে ৪০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বরবটি কচুর লতি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কিচেন মার্কেটে গতকাল প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।