ঢাকা বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

রাকসু নির্বাচন ১৫ সেপ্টেম্বর

দুশ্চিন্তায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ০১:২৯ এএম

অন্তত ১৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় রাকসু ভবনে। নির্বাচন হলে ছাড়তে হবে কার্যালয়

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) নির্বাচন। ক্যাম্পাসজুড়ে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনি হওয়া। দিন দিন বাড়ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা। নির্বাচনি নানা সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। তবে একেবারেই ভিন্ন বাস্তবতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক শিবিরে। অন্তত ১৫টি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের কার্যালয় রাকসু ভবনে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সবাইকেই ছাড়তে হবে কার্যালয়। তবে নতুন কার্যালয় কোথায় হবে তা এখনো অনিশ্চিত। নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা গত ৬ মাস ধরে চললেও তাদের পুনর্বাসনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি প্রশাসন। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন যাচ্ছে সাংস্কৃতিক নেতাকর্মীদের। 


সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর দাবি, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে পাকাপোক্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বা টিএসসিসিকে কেন্দ্র করে যদি সংগঠনগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়, সেটা হবে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, শিগগিরই রাকসু নির্বাচন হবে। ফলে রাকসু ভবনে থাকা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো টিএসসিসির অধিভুক্ত। তাই তাদের পুনর্বাসন টিএসসিসির মাধ্যমে হলেই অধিক গ্রহণযোগ্য হবে।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন রাকসুর কার্যকারিতা না থাকায় বিভিন্ন সময়ে ভবনে ঠাঁই পেয়েছে কয়েকটি সংগঠন। দ্বিতল ভবনটির নিচতলায় আছে সমকাল নাট্যচক্র, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার রাজশাহী, উদীচী সাংস্কৃতিক সংসদ, অরণি সাংস্কৃতিক সংসদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর কালচার অ্যান্ড এডুকেশন (এস) ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের কার্যালয়। দ্বিতীয় তলায় কার্যক্রম চালায় অনুশীলন নাট্যদল, সমগীত, তীর্থক নাটক, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংসদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি।
মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দারের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি ভবনের নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে ১ হাজার ৯৮২ বর্গফুট জায়গায় টিএসসিসি ভবন নির্মাণের অনুমতি পায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শুধু ৪০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে এ ভবন তৈরির কাজ শুরু করা হয়। নানা চড়াই-উতরায় পেরিয়ে নির্মাণকাজ শুরুর দুই যুগ পর ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর টিএসসিসির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।


মিলনায়তনে আসনসংকটসহ (৩০০) টিএসসিসি নানা সমস্যায় জর্জরিত বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। তারা অভিযোগ করেন, এই টিএসসিসিতে আসনসংখ্যা খুবই সীমিত, অ্যাকুস্টিক সিস্টেম কাজ করে না, ফ্যান ও এসিও নেই, মহড়া কক্ষও ছোটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাব। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনগুলো এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হচ্ছে।


২০১০ সাল থেকে রাকসু ভবনের দুই তলার একটি কক্ষে কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আলজাবের আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন হলে আমাদের অবশ্যই কার্যালয় স্থানান্তর করতে হবে। এরই মধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।’
পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বা টিএসসিসিকেন্দ্রিক সমাধানের দাবি করে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রায়হান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছে। কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছিলেন। তবে নতুন কার্যালয় কোথায় হবে এখনো সে বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে আমাদের দাবি থাকবে, পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বা টিএসসিসিকেন্দ্রিক সমাধান করা।’


অনুশীলন নাট্যদলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল আলম বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনের পর আমাদের  কার্যালয়সংকট পড়বে। প্রশাসনকে আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের দাবি করে স্বনণের আহ্বায়ক ইমন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দাবি হলো, একটা সুষ্ঠু  প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বা টিএসসিসিকে কেন্দ্র করে যদি সংগঠনগুলোর আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় সেটা সবচেয়ে ভালো হয়।’ 


সংগঠনগুলোর নেতাদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে শহিদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মুর্শিদা ফেরদৌস বিনতে হাবিব বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সংগঠনগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসন হোক। সংগঠনগুলো একটা ভালো জায়গা পাক। আমরা এটা নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথাও বলেছি। আশা করছি বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান হবে।’


সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘তাদের জন্য আমাদের কোনো না কোনো ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তাদের কার্যক্রম যেন বন্ধ না হয়, তারা যেন কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে, সে বিষয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা আছে। তবে এখনো দেড় মাসের বেশি সময় আছে। কোনো একটা সমাধান আমরা বের করে ফেলব।’ 


তবে সংগঠনগুলোর পুনর্বাসন টিএসএসসির মাধ্যমে করলেই অধিক গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান রাজু। তিনি বলেন, ‘রাকসু ভবনের মূল দাবিদার রাকসু নিজেই। তবে দীর্ঘদিন রাকসু চালু না থাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সেখানে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেহেতু শিগগিরই রাকসু নির্বাচন হবে, সেহেতু সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো টিএসসিসির অধিভুক্ত। ফলে তাদের পুনর্বাসন  টিএসসিসির মাধ্যমে হলেই অধিক গ্রহণযোগ্য হবে।’