ঢাকা বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

চারদিকে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল : কান্ডারি হুঁশিয়ার

রেজাউল করিম খোকন
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ০১:৪৩ এএম

চব্বিশের জুলাই থেকে পঁচিশের জুলাই-আগস্ট। ঐতিহাসিক গত অভ্যুত্থানের একটি বছর পূর্ণ না হতেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ঘটনাপ্রবাহ দেখে ব্যথিত ও হতাশ হতে হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন বাজি রেখে লড়াই করা সৈনিকদের মধ্যে এখন নানা মতবিরোধ, সন্দেহ, অবিশ্বাস, মতানৈক্য, পরস্পরের প্রতি বিষোদগার করা, অপরের চরিত্র হননের হীনচেষ্টা এমনকি একপক্ষের ওপর আরেক পক্ষের সরাসরি আক্রমণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি গত কিছুদিন ধরে। একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী স্বেচ্ছাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বিভেদ প্রকারন্তরে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয় নস্যাতের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে দুঃসাহসী করে তুলেছে। বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ন্যায়বিচার ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন শিক্ষার্থী নেতাদের কেউ কেউ নিজেরাই চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। অথচ তারাই সেদিন দেশকে চাঁদাবাজ মুক্ত, দখলদার মুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়েছিল। তাদের ওপর ভরসা করতে শুরু করেছিলাম আমরা। ভেবেছিলাম তাদের মাধ্যমে দেশে রাজনীতিতে পচাগলা নষ্ট সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে সম্পূর্ণ নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন সুস্থ সুন্দর রাজনৈতিক সংস্কৃতিচর্চা শুরু হবে। কিন্তু এক বছর না যেতেই তাদের চরিত্র এমনভাবে কলঙ্কিত হয়েছে , যা আমাদের হতাশ, ব্যথিত এবং লজ্জিত করেছে।
পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসররা এখন অনায়াসেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে কটাক্ষ করে কথা বলার সাহস পেয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কারো কাছে কাম্য নয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষ পূর্তিতে আমাদের আকুল আবেদন, আমরা যেন কোনোভাবেই দিকভ্রান্ত পথিক না হই। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আগে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছি, এখনো তেমন ঐক্যবদ্ধ থেকে অর্জিত বিজয়কে সুসংহত করতে হবে। অনৈতিক আচরণ, বিশৃঙ্খলা, পারস্পরিক বিভেদ, অবিশ্বাস, ঈর্ষাকাতরতা, লোভ-লালসা ত্যাগ করে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে পরাজিত শত্রুর নানা ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আরও সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে। বিভেদ, সংঘাত, পারস্পরিক অশ্রদ্ধার প্রকাশ ঘটিয়ে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটাতে হবে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। র‌্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখাও বহু নিরীহ আলেম এবং সাধারণ মানুষকে গুম করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা ব্যক্তিরা এখন নতুন চাপের মুখে রয়েছেন। তাদের অচেনা ফোন নম্বর থেকে ভয় দেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তারা যেন গুমের ঘটনার বিষয়ে মুখ না খোলেন এবং কোনো অভিযোগ যেন না করেন- সে বিষয়েও তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যারা গুমে জড়িত ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই এখনো নিজ নিজ পদে বহাল রয়েছেন, ফলে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন। মোবাইলে টাকা পাঠিয়ে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। গুমের শিকার অনেকের পরিবার অর্থনৈতিকভাবে চরম দুরবস্থায় পড়েছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের  শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে; কিন্তু কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এখন তিনি হার্ট ও কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। গুম ও মিথ্যা মামলার কারণে তারা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত ও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মানসিকভাবে তারা চরম বিপর্যস্ত। এখন জামিনে মুক্ত হলেও তারা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। 
 কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার রয়েছে সারা দেশে সর্বত্র সভা সমাবেশ অনুষ্ঠানের। কাউকে বাধা দেওয়া কিংবা ঘোষণা দিয়ে তাদের প্রতিরোধের অধিকারও নেই কারো। অথচ সম্প্রতি  গোপালগঞ্জে যা ঘটেছে তা নিজের চোখে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত লাইভ টেলিকাস্টে সরাসরি দেখেছি আমরা। যেখানে এডিট কিংবা বানোয়াট কিছু প্রচারের সুযোগ ছিল না। একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সভায় কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দিলেন না, অথচ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর জঙ্গি হামলা চালাল দুর্বৃত্তের দল। পতিত স্বৈরাচারের দোসর, সমর্থকরা। তাদের ফ্যাসিস্ট স্বভাব রক্তমজ্জায় এমনভাবে মিশে আছে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পরও তারা সেই আগের মতো আচরণ করছে। বিরোধী দলের উপস্থিতি সহ্য করতে পারছে না। তারা কেন উপলব্ধি করতে পারছে না, গোপালগঞ্জটাই বাংলাদেশ নয়। সারা দেশের মানুষ কী ভাবছেন, কী চাইছেন, তাদের আকাক্সক্ষা কী? গোপালগঞ্জ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে এক ধরনের আত্মতুষ্টিতে ভোগা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ মনে হয় ওদের। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের স্মৃতি আমরা ভুলে যাইনি। শহিদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, নাফিসারা আমাদের স্মৃতিতে হানা দেয় বারবার।
একটি রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশে আক্রমণ করে সেই দলের নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভয়ঙ্কর হামলা চালায় যারা, যারা সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন, প্রশাসন কাউকে তোয়াক্কা না করে জানোয়ারদের মতো আচরণ করে, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালায়, তাদের তো এমন পরিণতি হবেই, এটাই স্বাভাবিক। এখানে সহানুভূতি জানানোর কিছু নেই। এ রকম কর্মকা- যারা করে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে পরবর্তী সময়ে তারা আরও ভয়াবহ ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হবে, এটা আমাদের বুঝতে হবে।
আজকাল একশ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার উপদেষ্টাম-লীর নানা সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা, ব্যর্থতা, অক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন, প্রায় সময়ই দেখছি। এটা এক ধরনের অসুস্থ মন মানসিকতার প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এক ধরনের হীনম্মন্যতাবোধ, পতিত স্বৈরাচারের আমলে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা ভোগের স্মৃতি ভুলতে না পারাসহ নিজেদের অনেক সুপ্ত বাসনা কামনা পূরণ না হওয়ার বেদনা থেকে এমন আবোল-তাবোল বকছেন তারা। অনায়াসেই অন্যের সমালোচনা করা যায়। কিন্তু নিজের ঘাড়ে সেই দায়িত্ব অর্পিত হলে বোঝা যায় ওটা পরিপূর্ণভাবে পরিপালন করা কতটা কঠিন। আমরা দেশের বেশির ভাগ মানুষই তো জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা রেখে এসেছি। এখনো তা বিদ্যমান। আমরা তো সুবিধাভোগী কোনো গোষ্ঠী বা পরিবারের লোক নই। পিওর আমজনতা বলতে যা বোঝায়, আমরা তাই। এখন যারা মজা লুটতে পারছে না, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সময়ের মতো হালুয়া রুটির ভাগ পাচ্ছে না। কোনো পদ-পদবি পাচ্ছে না, হয়তো মনে বড় আশা ছিল কিছু একটা না একটা পদ বাগিয়ে নেব এই আমলেও। সেই সব লোভী তথাকথিত বিশিষ্টজনদের মনে নানা প্রশ্ন, নানা জ্বালা যন্ত্রণার আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। মোদ্দা কথা, আমরা এখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় থেকে অনেক অনেক ভালো আছি। হয়তো সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের পক্ষে। এটা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।  কারো পক্ষে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সুখী করা যাবে কখনো কোনো মানুষকে। যিনি এসব লম্বা চওড়া কথা বলেন, তাকে বসিয়ে দেওয়া হোক কোনো চেয়ারে, তখন তিনি বুঝতে পারবেন কত ধানে কত চাল। আমি নিজে একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলাম। চেয়ারে বসে টের পেয়েছি, কী যে মহা ঝামেলা সবকিছু সামাল দেওয়া ও দায়িত্ব পালন করার যন্ত্রণা। কেবলই মনে হতো এই চেয়ারটেয়ার ফেলে একদিকে ছুটে পালিয়ে যাই। দূরে কোনো পাহাড় কিংবা জঙ্গলে গিয়ে শান্তিতে বসবাস করি। অতএব, কথা বললে একটু হুঁশ করে বলা উচিত। মুখে বা মনে যা এলো তা বলে ফেলা একটা ছাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়।
পতিত স্বৈরাচারের কান্ডারি শেখ হাসিনা নিজেকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলে জাহির করে পুলকিত হতেন। বিভিন্ন জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় তার নামের আগে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা ‘ বলাটা নাকি সব নেতাদের জন্য ছিল বাধ্যতামূলক। এটা তার নির্দেশ। ২০১৪, ২০১৮ আর ২০২৪-এর জালিয়াতির নির্বাচনের মাধ্যমে গায়ের জোরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা মানুষটাই গণতন্ত্রের মানসকন্যা। এখন সেই গণতন্ত্রের মানসকন্যার স্বরূপ বেরিয়ে আসছে একে একে। এখন তো সব তথ্যই বেরিয়ে আসছে আস্তে আস্তে। সাবেক সিইসি স্বীকার করেছেন, আগের রাতেই ভোটের বাক্স ভরে রাখার নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন। সাবেক পুলিশ প্রধানও স্বীকার করেছেন, হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন। বালুভর্তি ট্রাক আর গোপালী পুলিশ দিয়ে খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ যিনি আটকে রেখেছিলেন তিনিই। তিনি নাকি গণতন্ত্রের  মানসকন্যা। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়  প্রায়শই ২০৪৯ সালের কথা বলতেন। হয়তো তার স্বপ্ন ছিল যে প্রকারেই হোক ২০৪৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। তখন তার বয়স হতো ১০০ বছর। তিনি হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন যে তিনি ওই পর্যন্ত বাঁচবেন এবং সাধারণ ‘পাবলিক ‘নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই সগর্বে কবরে প্রবেশ করবেন। আচ্ছা, তিনি কী আজরাইল (আ.) কেউ ম্যানেজ করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন? প্রশ্ন জাগে। কিন্তু বিধি বাম। পৃথিবীতে অন্যায়-অবিচার-অনিয়ম-বর্বরতা নৃশংসতা চালিয়ে আজীবন টিকে থাকা যায় না। তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা বলে একজন আছেন সবার ওপরে। তার ইশারায়ই পৃথিবীর সবকিছু পরিচালিত হয়ে আসছে। তিনি মাঝে মাঝে কাউকে কিছুটা ছাড় দেন হয়তো, কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেন না। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এখনো চারদিকে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলেছে। সুযোগ পেলেই বিষধর সাপের মতো ছোবল মারতে নানা কলাকৌশল প্রয়োগ করছে। এখন ছাত্র-জনতার দৌড় খেয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে আবারও এই গণতন্ত্রের মানসকন্যা নানাবিধ গণতান্ত্রিক (?) উপায় খুঁজে বের করছেন ক্ষমতায় ফেরার জন্য। প্রথমে তিনি আশা করেছিলেন, প্রতিবেশী দেশের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে আবার যেকোনো ভাবেই হোক ক্ষমতা ফিরে পাবেন। ভিন দেশের সরকার তাকে ঘাড়ে করে বাংলাদেশে নিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে যাবেন। সেটাতে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি ফন্দি করছিলেন, বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবাইকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আবার তাকেই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দেবেন। নিন্দুকেরা তো বলেন, দেশের খানিকটা অংশ নিয়ে গিয়েও কেউ তাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারে কিনা সে চেষ্টাও তিনি করেছেন। গণতন্ত্রের মানসকন্যা এখন ক্ষমতায় ফেরার জন্য আরও বহুবিধ গণতান্ত্রিক (?) উপায়ে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেনাবাহিনীর ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, পুলিশ বাহিনীর ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হুজি বা জেএমবির মতো বোমাবাজি করে অস্থিরতা সৃষ্টি করে সেই ধোঁয়াশার মধ্য দিয়ে যদি চট করে দেশে ঢুকে পড়ে চেয়ারের দিকে দৌড়ানো যায়। এই হচ্ছা গণতন্ত্রের মানসকন্যার নমুনা। সম্প্রতি পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যেখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত গণতন্ত্রের শত্রু আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণসহ সেনাবাহিনীর কারো সহযোগিতা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, আতঙ্ক, ভয়ঙ্কর সব ঘটনা সৃষ্টির মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করে তোলার ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ পেয়েছে। দেশের আপামর জনসাধারণের বিরুদ্ধে গিয়ে আবার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্নে বিভোর পতিত স্বৈরাচারের নেত্রী শেখ হাসিনার উচ্চাভিলাষী ভাবনা দেখে অবাক হয়ে গেছি আমরা। তার স্মরণ রাখা উচিত, যে যায় সে আর ফেরে না এত সহজে।  আফগান বাদশাহ ফেরেনি, ইরানের শাহ ফেরেনি, ফিলিপাইনের মার্কোস ফেরেনি, তিনিও ফিরবেন না।  তার প্রতি অনুরোধ, অনুসারীদের সুপরামর্শ দিন, বলুন পজিটিভ হতে, দেশ-সেবা করতে চাইলে ভালো বিকল্প বেছে নিতে। 
এই সময়ে চারদিকে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে গণতন্ত্রের শত্রুরা। তারা একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়ে নৈরাজ্য বিশৃঙ্খলা অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এ ব্যাপারে সরকারকে যেমন সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে, তেমনিভাবে সকল ফ্যাসিস্ট বিরোধী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সাধারণ জনগণের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার নেই কারো। আমরা সবাই একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ সুন্দর নির্বাচনের জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করছি। অতীতে পতিত স্বৈরাচার পরপর তিনটি কলঙ্কজনক নির্বাচন করে দেশে-বিদেশে নিন্দিত হয়েছেন। আমরা সেই নষ্ট, কলঙ্কিত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। সেজন্য দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সুন্দর ও নিরাপদ রাখতে হবে। অতএব, কান্ডারি হুঁশিয়ার। কোনোভাবেই ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী স্বেচ্ছাচারী দুঃশাসন আর ফিরে আসতে যাতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে।

রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার , কলাম লেখক