রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০১:৪০ এএম

দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি বড় ইতিবাচক সংকেত

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০১:৪০ এএম

গ্রাফিক্স চিত্র।

গ্রাফিক্স চিত্র।

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ এক আলোচনার প্রস্তুতি চলছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সাথে একটি ভিডিও কনফারেন্স করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ভাগে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি আনুষ্ঠানিক নোট পাঠিয়েছে।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেপ্টেম্বর মাসের প্রস্তাবিত এই বৈঠক বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক অবস্থানের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এখন প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে অর্থ বিভাগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি শুধু তহবিলের সহযোগিতা নিশ্চিত করার বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণেরও একটি বড় সুযোগ।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব

এই ভিডিও কনফারেন্স শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থান ও সংস্কার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে, বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে যে, বাংলাদেশ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে এবং বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদি এই বৈঠকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতা কাঠামো স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়, তবে সেটি দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি বড় ইতিবাচক সংকেত হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নতুন করে সাজানোর জন্য আইএমএফের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে।

সংস্কার কর্মসূচি ও বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি

২০২৩ সালে আইএমএফের সাথে বাংলাদেশ সরকার যে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সংস্কার কর্মসূচি স্বাক্ষর করেছিল, তার ধারাবাহিক বাস্তবায়ন এখন শেষ পর্যায়ে। ঋণটির আওতায় আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, কর কাঠামো সংস্কার এবং ব্যাংক খাতের জবাবদিহি জোরদার করার মতো গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যুক্ত ছিল। এই কর্মসূচির মধ্যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সফলভাবে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করেছে, যার ফলে আইএমএফ ইতিমধ্যে কয়েক দফায় অর্থ ছাড় করেছে।

চলতি বছরের মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা আইএমএফ প্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটি পত্র পাঠান, যেখানে তিনি বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন। এর উত্তরে, ১৯ মে ২০২৫ তারিখে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আইএমএফের সহায়তা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সংস্কার সফলভাবে সম্পন্ন করা। এর মধ্যে রয়েছেÑ খেলাপি ঋণ কমানো, ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা, কর আদায়ে স্বচ্ছতা আনা এবং ভর্তুকি সংস্কার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা।

সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবিত ভিডিও কনফারেন্স

এরই ধারাবাহিক যোগাযোগের অংশ হিসেবেই সেপ্টেম্বর মাসে প্রস্তাবিত ভিডিও কনফারেন্সের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইএমএফ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছেÑ ৮, ৯ বা ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা বা সাড়ে ৭টায় আলোচনার আয়োজন করা। এই বৈঠকে মূলত বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

অর্থ বিভাগের সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টার জন্য কোন তারিখ ও সময় সুবিধাজনক হবে তা নিশ্চিত করে দ্রুত আইএমএফকে জানাতে হবে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

অর্থনীতি ঘিরে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, রাজস্ব ঘাটতি এবং ব্যাংক খাতে আস্থাহীনতার মতো গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির থাকার কারণে দেশের রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয়ে চাপ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আইএমএফের সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চলতি বছরের জুন মাসে আইএমএফ জানায়, বাংলাদেশ তার সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকায় কিস্তি অনুমোদন করা হয়। এতে বাংলাদেশ কিস্তির ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পায়। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই অর্থ বাংলাদেশকে সাময়িকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সামাল দিতে সহায়তা করে।

আইএমএফের অবস্থান

আইএমএফ মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো সম্ভাবনাময়। দেশের বিশাল জনসংখ্যা, রপ্তানিনির্ভর শিল্প এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হতে পারে। তবে শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা, আর্থিক খাতের অস্থিরতা এবং স্বচ্ছতার অভাব সমাধান করা জরুরি।

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা তার পত্রে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমকে ‘উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা বাড়বে।

সংস্কারের উল্লেখযোগ্য শর্ত

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ আইএমএফের সাথে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চুক্তিবদ্ধ করে। সাত কিস্তিতে দেওয়া এই ঋণের আওতায় একাধিক কাঠামোগত সংস্কার শর্ত ছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বচ্ছতা আনা, কর আদায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, ব্যাংক খাতে জবাবদিহি বৃদ্ধি এবং খেলাপি ঋণ কমানো, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি যুক্তিসংগত করা এবং মুদ্রানীতি স্বাধীন ও কার্যকর করা।

এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। আইএমএফ ইতিমধ্যেই একাধিক কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!