ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

কক্সবাজার বিমানবন্দরে নিম্নমানের চীনা গাড়ি সরবরাহের পাঁয়তারা

মাইনুল হক ভূঁইয়া ও দেলোয়ার হোসেন
প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০১:৪৬ এএম
কক্সবাজার বিমানবন্দর। ছবি- সংগৃহীত

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অধীন কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রকল্পে ফায়ারের জন্য গাড়ি কেনা নিয়ে আবারও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে পূর্বতন প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার বাতিল করে পুনঃটেন্ডার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গাড়ির ব্র্যান্ডের বিষয়টিও বদলে দেওয়া হয়েছে।

আগে সেখানে গাড়ি সরবরাহের কাজ করছিল অ্যারোনেস। এর আগে ছিল নাভানা। পুনঃটেন্ডারের পর বেবিচকের এক প্রভাবশালী সদস্যের ইঙ্গিতে যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়, সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘স্পাইশি’। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হলেন সাদি ও মেহেদি। তারা আপন দুই ভাই। বাইরে থেকে অংশীদার হয়েছেন মুর্তুজা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কাজ পেয়ে স্পাইশি নামের এই প্রতিষ্ঠান নি¤œমানের চীনা নাফকো গাড়ি সরবরাহের পাঁয়তারা করছে। প্রথম টেন্ডারের স্পেসিফিকেশনে গাড়ির ব্র্যান্ড ছিল ‘রোজেনবাওয়ার’। 

বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার প্রজেক্টের জন্য মোট তিনটি ফায়ার গাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উল্লিখিত ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি কেনা হয়। জার্মান কোম্পানি রোজেনবাওয়ার, যার মূল উৎপাদনকারী দেশ হলো অস্ট্রিয়া। এই গাড়ি আরও কয়েকটি বিমানবন্দর যেমন সিলেট, সৈয়দপুর এবং ঢাকায় অপারেশনে রয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা যায়, এসব গাড়ির পারফরম্যান্স উন্নত মানের। কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ও একজন প্রভাবশালী সদস্যের তদবিরের কারণে গাড়ির স্পেসিফিকেশন শিথিল হওয়ায় এখন যেকোনো গাড়ি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ নিন্মমানের নাফকো গাড়ি টেন্ডারে অংশ নিলে আর্থিক বিবেচনায় আর কোনো ভালো কোম্পানি টিকতে পারবে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার প্রকল্পের জন্য বাকি দুটি ফায়ার ভেহিকল কেনার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এ রকম হতে যাচ্ছে। তারা আশঙ্কা করছে, স্পেসিফিকেশন শিথিল করে দেওয়ায় রোজেনবাওয়ারের মতো ভালো গাড়ি আর কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ছাড়া সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্পাইশিকে নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

জানা যায়, শাহজালালসহ অন্যান্য বিমানবন্দরে দুই প্রতিষ্ঠানের লাউঞ্জ বাতিল করে স্পাইশি রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী সাদিকে বরাদ্দ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে বেবিচকের একটি চক্র। এ নিয়ে চক্রটির সঙ্গে স্পাইশির কোটি টাকায় রফা হয়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী দোসর তকমা দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের অভিযোগও আছে চক্রটির বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগ প্রধান উপদেষ্টা ও বেবিচক চেয়ারম্যানের দপ্তরে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগপত্রের কপি পেয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ গত ৭ আগস্ট ‘লাউঞ্জ ঘিরে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এদিকে বেবিচকের এক সদস্যের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট নিয়ে রূপালী বাংলাদেশসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে রিপোর্ট হওয়ার পর আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন সংবাদকর্মী নানাভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারা নানাভাবে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন। শাহজালাল বিমানবন্দরে ৫টি প্রতিষ্ঠানের   ইজারা নবায়নের কর্ণধারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা গড়ে তুলছেন। পাশাপাশি স্পাইশি রেস্টুরেন্টের কর্ণধারের সঙ্গেও মিলেমিশে আর্থিক লাভের পাঁয়তারা করছেন।  

আওয়ামী দোসর ওইসব সাংবাদিক বেবিচকের সদর দপ্তর ও শাহজালালে কমপক্ষে তিনটি স্থাপনা ইজারা নিয়ে তা বছরের পর বছর নবায়ন করে চলেছেন। গত ৩০ জুনের পরে পতিত সরকারের আমলে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ইজারা বাতিলে বেবিচকের ঘোষণা থাকলেও তাদের ইজারা বাতিল হয়নি। বাতিল হয়নি স্পাইশি রেস্টুরেন্টের ইজারা। সেই সঙ্গে সাবেক ও প্রয়াত দুই রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয়ধারী ইকবালের ৫ প্রতিষ্ঠানের ইজারাও বাতিল হয়নি।

অথচ এয়ারপোর্ট রেস্টুরেন্টের ইজারা বাতিল করে তা সিলগালা করা হয়েছে, ওয়ান্ডার-ইন হোটেল বেবিচকের দখলে নিয়ে তা সিলগালা করা হয়েছে। কিন্তু সদর দপ্তরের হোটেল, শাহজালালের ‘কনক’র ইজারা এখনো বহাল। বিষয়টি খোদ বেবিচকেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে বেবিচকের সদস্য (অপারেশন) এয়ার কমোডর আবু সৈয়দ মেহবুব খানের মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দেওয়া হলেও সাড়া দেননি।