বর্ষায় চা-বাগান যেন নতুন রূপে সেজে ওঠে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় চা-গাছগুলো সজীব হয়ে গাঢ় সবুজে ভরে যায়। আর এই সৌন্দর্যই এখন সবচেয়ে বেশি টানছে পর্যটকদের। ঝুম বৃষ্টিতে জানালার পাশে বসে এক কাপ চা হাতে বাগানে বৃষ্টির ঝাপটা দেখাÑ এ যেন অনন্য এক আনন্দ। আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ চা শুধু পানীয় নয়, বরং প্রকৃতির স্বস্তি ও প্রশান্তির প্রতীক।
বর্ষায় চা-বাগানে বসে চায়ের কাপে চুমুক, একদিকে চা-পাতায় বৃষ্টির ফোঁটার ছাঁট, অন্যদিকে টাটকা চা-পাতার সুবাসÑ এ অভিজ্ঞতা পেতে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে এখন ভিড় করছেন পর্যটকরা। ভাড়া করা খোলা জিপে করে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন গাঢ় সবুজের পাহাড়ি টিলায়, দেখছেন লেক ও গলফ মাঠে ঘেরা অপার্থিব প্রকৃতি।
বছরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় শ্রীমঙ্গলে। এ সময় মাটি সিক্ত হয়ে চা-গাছগুলো নতুন পাতা মেলে ধরে। টিলা থেকে সমতলÑ যেদিকেই চোখ যায়, কেবল সবুজের সমারোহ। সেই সঙ্গে নারী শ্রমিকদের চা-পাতা সংগ্রহের দৃশ্য পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয়।
জানা যায়, দেশের ১৬৮টি চা-বাগানের মধ্যে ৯৩টিই মৌলভীবাজারে। ২ হাজার ৭৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় চা-বাগানের জমি এক লাখ ৫৭ হাজার একরেরও বেশি। এর মধ্যে একসঙ্গে ৪০টি বাগান রয়েছে শ্রীমঙ্গলে এবং ২২টি কমলগঞ্জে। এজন্যই মৌলভীবাজারকে বলা হয় ‘চায়ের রাজধানী’। এখানকার অনেক চা-বাগানের ভেতরে রয়েছে স্বচ্ছ পানির লেক। বর্ষার সজীবতায় এগুলো হয়ে ওঠে আরও মোহনীয়।
শ্রীমঙ্গলে আসা পর্যটকদের আরেকটি বড় আকর্ষণ সাত রঙের চা। প্রতিটি স্তরের রং ও স্বাদ আলাদা। নীলকণ্ঠ টি কেবিনে উদ্ভাবক রমেশ রাম গৌড়ের এই অনন্য চা পান করতে ভুল করেন না কেউই।
এ অঞ্চলে রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরোনো চা গবেষণা কেন্দ্রÑ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)। পাকিস্তান চা বোর্ড ১৯৫৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করে, আর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিকে প্রধান কার্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে।
বাংলাদেশে চা শিল্পের সূচনা হয় ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া বাগানে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ১৮৫৭ সালে। তবে সবচেয়ে বড় বিস্তার ঘটে মৌলভীবাজারে। বর্তমানে এখানকার প্রায় ৮০টি কারখানায় বর্ষাকালে ২৪ ঘণ্টা চা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ, শমশেরনগর কিংবা কুলাউড়া স্টেশনে নেমে সিএনজি, রিকশা বা খোলা জিপে চা-বাগান ঘোরা যায়। আবার সড়কপথেও শ্রীমঙ্গল বা মৌলভীবাজার শহরে নেমে লোকাল যানবাহনে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন