বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এম. কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ০২:১৩ এএম

মন রাঙানো রাঙামাটির পথ

এম. কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ০২:১৩ এএম

মন রাঙানো রাঙামাটির পথ

এলোমেলো সারি আর উঁচুনিচু ছোটবড় পাহাড়ের সমাবেশ। দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঝরনাধারার কলতান। সবুজ পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বিস্তৃত আঁকাবাঁকা কাপ্তাই হ্রদ। ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপত্তি কর্ণফুলী নদী গিয়ে মিলেছে বঙ্গোপসাগরে। তবে মাঝখানে বিচ্ছিন্ন করেছে রাঙামাটির কাপ্তাই বাঁধ।

কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে নির্মিত হয়েছে ওই বাঁধটি। বাঁধের ফলে কাপ্তাই হ্রদে মিলিয়েছে কর্ণফুলী। কাপ্তাই হ্রদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি। বর্ষা শেষে নবরূপে ফিরেছে সবুজ পাহাড়মালা, হ্রদ আর ঝরনাধারা। নয়নাভিরাম এমন দৃশ্যপটে প্রকৃতি মেলেছে দুহাত। ছড়িয়েছে সবুজ পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশির হাতছানি। নজর কেড়েছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। মনোরম কাপ্তাই হ্রদ, সুবলং ঝরনাধারা থেকে মেঘছোঁয়া সাজেক পাহাড় পর্যন্ত বেড়েছে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আনাগোনা। শুভ্র-সাদা এ শরৎবেলায় পুরোদমে শুরু হয়েছে রাঙামাটির পর্যটন মৌসুম।

হ্রদ, পাহাড় আর বিস্তৃত পাহাড়ি ঝরনাধারার সমাবেশ পার্বত্য জনপদ রাঙামাটির প্রকৃতি মনোমুগ্ধকর এক সৌন্দর্যের আধার। কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলধারা, পর্যটন মোটেলের মনোরম ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝরনাধারা, চাকমা রাজবাড়ি, আন্তর্জাতিকখ্যাত বৌদ্ধতীর্থ রাঙমাটি রাজবন বিহার, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, সুখী নীলগঞ্জ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, ডিসি বাংলো, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক, কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বহুসংখ্যক পর্যটন রিসোর্টসহ জেলায় রয়েছে প্রচুর নান্দনিক ও দর্শনীয় স্থাপনা। যেদিকে চোখ যায়, মেলে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জল। চারদিকে বিস্তীর্ণ সবুজ পাহাড়। বিস্তৃত পাহাড়ে সবুজের সমারোহ।

পাহাড়ে ঘেরা হ্রদের স্বচ্ছ জলধারা। এ যেন শিল্পীর আঁকা জীবন্ত ছবি। আর সীমান্তবর্তী মেঘছোঁয়া পাহাড়ের আবেশ সাজেকভ্যালিতে গড়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর ভূ-স্বর্গ। প্রতি বছর পর্যটননগরী রাঙামাটি ও সাজেক পর্যটন কেন্দ্রসহ আনাচে-কানাচে উপভোগ্য স্থাপনায় আগমন ঘটে প্রকৃতিপ্রেমী কয়েক লাখ পর্যটকের। বর্ষার পরপরই শুরু এখানকার পর্যটন মৌসুমের। ইতোমধ্যে রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তবে রাঙামাটির দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতুটি এখনো কাপ্তাই হ্রদের পানির নিচে ডুবে থাকায় আগত পর্যটকদের কিছুটা মন ক্ষুণœ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা বলেন, আমাদের পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় পর্যটকদের সমাগম বেশি। শীত মৌসুম সামনে রেখে আমাদের মোটেলে অগ্রিম বুকিং অব্যাহত রয়েছে। ডিসেম্বর মাসকে সামনে রেখে ৮০-৯০ শতাংশ বুকিং আছে। ২৭ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

তিনি জানান, ঝুলন্ত সেতুটি বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে রয়েছে। তাই সেতু দিয়ে পদচারণা বা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। তবে পর্যটকদের পারাপারে ঘাটে নৌকা ও সাম্পান চলাচল রয়েছে। পানি কমলে সেতুটি ভেসে উঠলেই তা খুলে দেওয়া হবে।

বর্তমানে পর্যটন মোটেল ও কটেজসহ রাঙামাটির পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে। স্থানীয়রাও ছুটছেন রাঙামাটির পর্যটন এলাকায়। অনেকে কর্মব্যবস্ততার ফাঁকে পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছেন রাঙামাটি। নৌ-বিহারে উপভোগ করছেন কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলাধারা।

রাঙামাটির অবস্থান ও ভূ-প্রকৃতি : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। এর উত্তরে খাগড়াছড়ি, দক্ষিণে বান্দরবান জেলা, পূর্বে ভারতের মিজোরাম আর পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা। জেলার মাঝ দিয়ে বইয়ে চলা পাহাড়িকন্যা কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড়। কর্ণফুলী থেকে উৎপত্তি হয়েছে চেঙ্গী, মাইনী, কাচালং, সুবলং, রাইংখিয়ং, বরকল, হরিণা। এসব নদী মিলিয়ে গেছে কাপ্তাই হ্রদে। কাপ্তাই হ্রদ পরিবেষ্টিত রাঙামাটি জেলা গড়ে উঠেছে ছোটবড় অসংখ্য পাহাড়ের সমন্বয়ে। পাহাড়গুলো সবুজ বনবাদাড়ে ঘেরা। পাহাড়, বন আর স্বচ্ছ জলধারা তৈরি করেছে রাঙামাটির নৈসর্গিক আবেশ।

পাহাড়ে এখন শরতের দোলা। যার শীতশীত হাওয়া স্পর্শ করে হৃদয়জুড়ে। আকাশে কখনও মেঘ, কখনও হঠাৎ বৃষ্টি, কখনও মিষ্টি সকাল আর কখনও বা রোদেলা দুপুর, মিষ্টি বিকেল। এমন দিনে ঘুরে বেড়ানো সত্যি রোমাঞ্চকর। পাহাড়ে, বনে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখপাখালীর ছুটে চলা। শহর থেকে কিছু দূরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শোনা যায় ঝিঁঝি পোকার ডাক। সকালে ঘুম ভাঙাবে হরেকরকম পাখির কিচির মিচির ডাক। জীবন্ত রয়েছে পাহাড়ি ঝরনাধারাগুলো।

রাঙামাটির প্রবেশমুখে কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় রয়েছে ঠান্ডাছড়ি চা-বাগান, উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র, কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কল কেপিএম, কাপ্তাই বাঁধ, জাতীয় উদ্যান, নেভি ক্যাম্প, জুম প্যানোরমা স্পট, শিলছড়ি বনানী পর্যটন স্পট, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার, ওয়া¹া চা-বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!