ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

১ কোটি টাকার জন্য আরএনবির  ৫ হাজার সদস্যের কষ্টের জীবন

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০২:০৫ এএম

মাসে মাত্র এক কোটি টাকা বাজেটের জন্য অমানবিক জীবন কাটাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) পাঁচ হাজার সদস্য। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বারবার রেল মন্ত্রণালয়সহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিয়ে দু’মুঠো খাবারের জন্য মন গলাতে পারেননি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। যে কারণে গত ১৫ বছরের ৫ বার ‘রেশন’ প্রস্তাবের ফাইল ফেরত পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আনসার-পুলিশসহ দেশের অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জন্য ‘রেশন’ ও ‘ঝুঁকি’ ভাতা দেওয়া হলেও মাত্র এক কোটি টাকা বাজেটের অভাবে আরএনবি’র মানবিক এই আবেদন মঞ্জুর করেতে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। আর এ কারণে অভাবে পড়ে স্বভাব নষ্ট হচ্ছে আরএনবির সদস্যদের। ছোটখাটো চুরিসহ তারা জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধে। মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য, পেটে ভাত না থাকলে মানুষ অপরাধে জড়ায় সবচেয়ে বেশি। আরএনবির ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী হলো রেলওয়ের বিশেষ একটি বাহিনী যারা রেলওয়ের সম্পত্তিসহ যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। একই সাথে রেলওয়ের আশপাশে অবৈধ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমন এবং রেলপথে মাদক পাচার রোধে এই বাহিনীর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এই বাহিনীকে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও দেওয়া হচ্ছে না ঝুঁকি ভাতাও। 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে আরএনবিতে কর্মরত আছেন প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য। এর মধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে কর্মরত তিন হাজার ৪০০ এবং পশ্চিমাঞ্চলে দুই হাজার সদস্য। এই পাঁচ হাজার ৪০০ সদস্যকে ‘রেশন’ ভাতা দিতে গেলে সরকারের মাসে খরচ হবে মাত্র এক কোটি টাকা। বছরে ১২ কোটি। ২০১০ সালের পর রেশন ভাতার জন্য একাধিকবার আবেদন করেছে আরএনবি। এর মধ্যে প্রথম আবেদন করে ২০১১ সালে এরপর ২০১৯, ২০২২ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে। প্রতিবারই বাজেটের অভাব দেখিয়ে অসম্মতি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। 

আরএনবির একাধিক সদস্য এই প্রতিবেদককে জানান, রেলওয়েতে যারা নিরাপত্তার কাজ করেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ সদস্যকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়। যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে ঘর ভাড়া হয় না। সন্তানদের দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ানো আরও কষ্টের। 

পূর্বাঞ্চলে কর্মরত মামুদুল আলম নামে (ছদ্মনাম) এক সদস্য জানান, আনসার বাহিনীর একজন সদস্য প্রতিদিন ১২০ টাকা রেশন ভাতা পেলেও নিরাপত্তামূলক একই কাজ করে আমাদের জন্য কোনো প্রকার রেশন ভাতা বরাদ্দ নাই। কিন্তু কেন? আনসার ও পুলিশে যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা মানুষ; আর আমরা মানুষ না? তাদের পেট আছে, পরিবার আছে; আমাদের পেট নাই? পরিবার নাই?

পূর্বাঞ্চলে কর্মরত অপর এক সদস্য বলেন, আনসার-পুলিশের মতো আমরাও তো ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আর মাদক উদ্ধারের আমাদেরও তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অপরাধীদের মোবাবিলা করতে হয়। আনসার-পুলিশ যদি ঝুঁকি ও রেশন ভাতা পায়, আমরা পাব না কেন?

আরএনবি পূর্বাঞ্চলে কর্মরত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০১৬-এর ধারা-৪(৩) মোতাবেক দেশে বিদ্যমান অন্যান্য বাহিনী যেমন- আনসার, পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মতো আরএনবিও একটি শৃঙ্খলা বাহিনী। বাহিনীটির গঠন ও কার্যক্রম অন্যান্য বাহিনীর মতো অস্ত্রসহ ২৪ ঘণ্টা ডিউটি, ব্যারাকে অবস্থান, সাপ্তাহিক ছুটিবিহীন। তবুও দেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেশন-ঝুঁকি ভাতাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে আরএনবি বঞ্চিত।

আরএনবির সদস্যদের রেশন ও ঝুঁিক ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি অমানবিক উল্লেখ করে মানবাধিকার কর্মী আবু সুফিয়ান বলেন, একটি বাহিনীর জন্য রেশন ভাতার মতো মানবিক এমন ছোটখাটো প্রয়োজনও যদি মেটাতে না পারি তাহলে এই বাহিনীর কাছে আমরা ভালো কিছু কীভাবে আশা করব। তিনি আরও বলেন, পেটে ক্ষুধা নিয়ে যুদ্ধ করা যায় না। 

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার সুবক্ত গীন বলেন, আরএনবির জন্য রেশনের ব্যবস্থা করতে দীর্ঘদিন ধরে আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি, অচিরেই হয়ে যাবে।