চলমান ডিজিটাল যুগে ডাক বিভাগের কার্যক্রমে প্রয়োজন যুগোপযোগী রূপান্তর। একসময় কেবল চিঠি ও পার্সেল আদান-প্রদানের মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগ, এখন এটি হতে পারে দেশের ই-কমার্স ও ডিজিটাল সেবার গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। আধুনিক প্রযুক্তি, অনলাইন ট্র্যাকিং, মোবাইল পেমেন্ট এবং দ্রুত ডেলিভারির মাধ্যমে ডাক সেবাকে আরও কার্যকর ও জনগণের আস্থার প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে ডাক বিভাগকে স্মার্ট ও দক্ষ করে তুলতে পারলেই এটি আবারও জনজীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠবে—যেমনটি একসময় ছিল মানুষের যোগাযোগের প্রাণসেতু।
আজ বিশ্ব ডাক দিবস। বিশ্বের প্রতিটি দেশে ডাক বিভাগের ভূমিকা, ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ উদ্ভাবনের গুরুত্ব স্মরণে প্রতিবছর এই দিনটি উদ্যাপিত হয়। ১৮৭৪ সালের এই দিনে সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে গঠিত হয় ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (UPU)—যার মাধ্যমে বিশ্বের ডাকব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে একত্রিত হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে জাতিসংঘের বিশেষায়িত এই সংস্থার উদ্যোগে দিনটি পালন শুরু হয়।
দিবসটি উপলক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে ডাক ভবনে দুই দিনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘জনগণের জন্য ডাক: স্থানীয় পরিষেবা, বৈশ্বিক পরিসর।’ যার উদ্দেশ্য জনগণের সঙ্গে সরকারের সংযোগ বৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়নে ডাক সেবার ভূমিকা তুলে ধরা এবং আধুনিক ডাক ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
ডাক দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ডাক বিভাগকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করে যুগোপযোগী করতে কাজ করছে। কেবল সেবা প্রদানে সীমাবদ্ধ না থেকে এটি স্থানীয় অর্থনীতির কার্যকর ওয়ান স্টপ সেন্টার হবে বলে আমি আশা করি।
ডাক শুধু চিঠি বহনের মাধ্যম নয়—এটি এক মানবিক সংযোগ, এক ঐতিহাসিক বন্ধন। প্রযুক্তির অগ্রগতির মধ্যেও ডাক দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মানুষে মানুষে সম্পর্কের উষ্ণতা কখনো বিলুপ্ত হয় না।
ইতিহাস ও তাৎপর্য: একসময় চিঠি ছিল মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, ব্যবসা কিংবা প্রশাসনিক কার্যক্রম—সবকিছুই চলত ডাকপিয়নের কাঁধে ভর করে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ই-মেইল, মেসেঞ্জার ও কুরিয়ার সার্ভিসের বিস্তারে প্রচলিত ডাকব্যবস্থা কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও, ডাক আজও রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ ও সরকারি সেবার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিশেষত বাংলাদেশে ডাক বিভাগ শুধু চিঠি নয়, ই-পোস্ট, ডাক ব্যাংকিং, মোবাইল মানি অর্ডার, নগদসহ ডিজিটাল আর্থিক সেবা দিয়েও জনগণের সেবায় কাজ করছে। গ্রাম ও শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ডাকঘর এখনো মানুষের আস্থার প্রতীক।
বাংলাদেশের ডাকসেবা : বাংলাদেশে ডাক বিভাগের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর ডাক বিভাগ ছিল রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের অন্যতম স্তম্ভ। বর্তমানে সারা দেশে ৯,৮৮৬টি ডাকঘর রয়েছে, যার মধ্যে অনেকটি ডিজিটাল সেবায় রূপান্তরিত হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প বাস্তবায়নে ডাক বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে গতকাল বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাক ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবদুন নাসের খান, আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। এ সময় বিশেষ সহকারী দুই দিনের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।