গুম ও খুনের শিকার স্বজনদের পরিবারের কান্না বন্ধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা গুম কমিশনকে পাবলিকলি আনতে ও পাবলিক শুনানি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জবাবদিহি তাদের করতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সংসদ ভবনের সামনে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন মায়ের ডাকের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, এই বাচ্চাগুলোর সঙ্গে আমরা সারাক্ষণ আছি, তুলির (সানজিদা ইসলাম তুলি) মায়ের সঙ্গে সারাক্ষণ আছি এবং আমরা শেষ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের বিচার চূড়ান্ত হবে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব। প্রথম দিন থেকে আমরা এ গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে আছি। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে আছি। আমরা আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছয় বছর মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থেকেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব নির্বাসিত হয়েছিলেন, এখনো আছেন। আমরা যারা নেতৃত্ব করেছি তার মধ্যে একজনও বাকি নেই, যার বিরুদ্ধে একশ, দেড়শ, দুইশ, তিনশ, চারশ পর্যন্ত মামলা নেই এবং সেই মামলায় গ্রেপ্তার হইনি। তাই এ কথা ভাবাটা ভুল হবে, যে বিএনপি এ বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাবে।
গুম-খুনের শিকার স্বজনদের কষ্টের বিষয়টি উল্লেখ করতে বিএনপি মহাসচিব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, আন্দোলনে নামা অনেকেই গুম হয়ে গেল। এক পরিবারের সাতজন পর্যন্তও গুম হলো। স্বজনহারা ছোট বাচ্চাদের দেখলে কষ্ট হয়, কারণ তাদের একসময় আরও ছোট অবস্থায় দেখেছিলাম। আজ তারা বড় হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন অবশ্যই চায়, এই নির্বাচন চায় এই বিচারকে (গুমের ঘটনার) নিশ্চিত করার জন্য, বিচারগুলোকে ত্বরান্বিত করার জন্য। আমাদের কাছে গুম বা ডিজ-অ্যাপিয়ারেন্স বিষয়টা বই বা খবরের কাগজের একটা তথ্য ছিল। এই অনুষ্ঠানে একজন বলল, ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় এটা হয়। আমাদের দেশে এটা (গুম) আগে ছিল না। এই প্রথম ভয়াবহ দানব হাসিনা সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই গুম এ দেশে নিয়ে এসেছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, আমাদের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে, ১ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তার কোনো সদুত্তর পাইনি।
হাসিনার বিচার দেশের মাটিতেই হতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এ প্রত্যাশা করব, আমাদের এ শিশুগুলো যারা বাবা হারিয়েছে, বোনেরা যারা ভাই হারিয়েছে, মায়েরা যারা সন্তান হারিয়েছে তাদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য এ সরকার চেষ্টা করবে বের করে নিয়ে আসার। সে যেই হোক না কেন, যারাই হোক না কেন, যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, এর চেয়ে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। আমরা সবাই জানি, যে ইনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে একটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং সেই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদ-। আজকে এটা প্রমাণিত হয়েছে, হাসিনা এ হত্যাকা-গুলোর জন্য দায়ী, হাসিনা এই গুমের জন্য দায়ী, হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে। এ দেশের মাটিতে হতে হবে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে।
‘মায়ের ডাক’-এর প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন।