গ্রীষ্মকালে উৎপাদিত সবজি এখন ভাদ্র মাসের শুরুতে বাজারে মিলছে কম। সরবরাহ ঘাটতিতে তাই বাড়ছে সবজির দাম। বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন অন্তত ৮০ টাকা। সারা বছর উৎপাদন হওয়া লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার মতো ভোগ্যপণ্যগুলোর দামও সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। শুধু স্থিতিশীল রয়েছে আলু এবং পেঁপের দাম।
একই সঙ্গে বাজারে দাম বেড়েছে কাঁচামরিচ, দেশি পেঁয়াজ, দেশি মসুর ডাল, সোনালি মুরগি, ডিম ও মাছের দাম। বেশি দামে বিক্রি হওয়া চালের মূল্য আগের মতোই রয়েছে, বলেছেন বিক্রেতারা। তবে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকার অধিকাংশ ভোক্তা। শুক্রবার ও গতকাল শনিবার ঢাকার মগবাজারের চারুলতা মার্কেট, মালিবাগ, আগারগাঁও, শান্তিনগর, তালতলা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিক্রেতারা বলেছেন, ‘বর্ষার সবজি এখন বাজারে নাই বললেই নেই, যা দেখেছেন মৌসুম শেষের সবজি। এখন শীতের সবজির জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না। বৃষ্টি কমলে আশি^নের শুরুতেই সবজি আসা শুরু হবে।’
ঢাকার মালিবাগ বাজারে সবজি ক্রেতা মশিউর রহমান বলেন, ‘বাজারের আগে ভরপুর সবজি থাকত, এখন তা নেই। যার কারণে দামও বেশি। শতকের নিচে সবজি পাওয়া মুশকিল। পুঁইশাকের আঁটি এখন ৪০ টাকা। তবে কয়েক দিন আগেও দাম একটু কম ছিল।’
ঢাকার শান্তিনগর বাজারের কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসেন রফিক নামের একজন বিমাকর্মী। তিনি বলেন, ‘বাজার সম্পর্কে বলা মুশকিল। এক ডজন ডিম কিনলাম ১৪০ টাকায়, যা গত ২০ দিন আগে কিনেছি ১১৫ টাকায়। চালের দাম বেড়েছে গত এক বছরে প্রতি বস্তায় অন্তত ১ হাজার টাকা। যার কারণে অনেক কষ্টে আছি।’ রংপুরের গ্রামের বাজারে মুখীকচু ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হলেও ঢাকায় প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে আলু ও পেঁপের দাম গ্রাম ও শহরে একই। মাত্র ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই দুটি সবজি।
ঢাকার বাজারে সবজি ৮০ টাকার কমে মিলছে না। এমনকি গ্রীষ্মের সবজি ঢেঁড়স-পটোলও বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। বরবটি, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ধুন্দল ও কাঁকরোল স্থানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ন্যূনতম ৭০ টাকা কেজি দরে।
মালিবাগ ও মধুবাগ বাজারে বাজারে কাঁচামরিচের দাম অনেক চড়া। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩২০ টাকায়। কয়েক দিন আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। বাজারে এখন প্রতি পিস চালকুমড়া ৭০ টাকা, লাউ ১০০, প্রতি কেজি মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দামও। এখন দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোয় প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। ডিমের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে কারওয়ান বাজরের কিচের মার্কেটের ডিম ব্যবসায়ী উজ্জ্বল বলেন, ‘ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসের শেষ পর্যন্ত ডিমের উৎপাদন কমে। যার কারণে দামও বাড়ে। নতুন ধান না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না, এটা প্রতিবছরই এমন হয়।’ ডিম ব্যবসায়ী উজ্জ¦ল বলেন, ‘১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সাদা ডিম আর ১৫০ টাকা বাদামি রঙের ডিম। ১০ দিন আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। গরিবের আহার আলু ২৮ থেকে ৩০ এবং বিআর আটাশ চাল পাওয়া যাচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। চালের দাম সম্পর্কে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির এম এ আউয়াল তালুকদার বলেন, ‘বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে সরকার ভোগ্যপণ্যের বাজারে ব্যবসার অনুমোদন দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ করেছে। এখন চালের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই। আগের মিলাররা কেজিতে দুই-এক টাকা দাম বাড়াত। আর করপোরেট কোম্পানি দাম বাড়ায় কেজিতে ৬-৮ টাকা।’
বাজারের কয়েকজন ক্রেতা জানান, দিন দিন কাঁচাবাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে সবজির দাম। বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে।
মূল্যবৃদ্ধির আগুনে পুড়তে থাকা ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বছরের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বাজারে সরবরাহ পরিমিত থাকলেও ধীরে বাড়ছে এসব পণ্যের দাম। ভোগ্যপণ্যের তালিকা তুলে ধরে টিসিবি জানিয়েছে, খোলা ময়দা, চিনি, আটা, মুগ ডাল, ছোলা, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। অন্যদিকে সয়াবিন তেল (২ লিটার) ও আমদানি করা রসুনের দাম কমেছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী রহমান রাফি বলেন, ‘বাজারে সবজির দাম কয়েক দিন ধরে অনেক বেড়েছে। কিছু দিন আগেও সবজির দাম কম ছিল, দুই সপ্তাহ ধরে দাম বাড়তি। দোকানে ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।’
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজি ও মাছের সরবরাহ কম। তাই নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে মাছ ও সবজির বদলে ডিমে বেশি আগ্রহী হয়েছেন। যার কারণে দাম বাড়ছে। একই সঙ্গে ‘দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে’ বলে জানান কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের কিশোর ব্যবসায়ী আরাফাত হোসেন।