পূর্বাচলের নাম শুনলেই এখন অনেকের চোখে ভেসে ওঠে হাঁসের ঝাল মাংস, রুমালি রুটি আর বাহারি পিঠার মেলা। সপ্তাহের ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন কেউ, আবার ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে বন্ধুবান্ধবসহ একটু রসনার স্বাদ নিতে হাজির হন অনেকে। ফলে প্রতিদিন রূপগঞ্জের পূর্বাচলে জমে ওঠে এক অনন্য ভোজন উৎসব।
দেশি হাঁসের ঝাল মাংসই এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। এর সঙ্গে পরিবেশন করা হয় রুমালি রুটি, চাপটি, চিতই পিঠা, গরু-মুরগির ভুনা কিংবা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ। শিশু থেকে বৃদ্ধ, শ্রমিক থেকে ব্যাংকার, সবাই মেতে ওঠেন এই ভোজন উৎসবে। খাবারের এই জমজমাট আয়োজনের ফলে গড়ে উঠেছে বিশাল কর্মযজ্ঞ, ঘুরছে স্থানীয় অর্থনীতির চাকা।
তবে সুস্বাদের এই টানে যত ভিড় বাড়ছে, তত বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। খোলা আকাশের নিচে রান্না, ধুলোবালু খাবারে পড়া, এমনকি অর্ধসিদ্ধ মাংস খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসের আগুনে সরাসরি পোড়ানো কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফুটন্ত পানিতে রাখার ফলে তৈরি হচ্ছে ‘ডাবল কুকিং’, যা দীর্ঘ মেয়াদে মানবদেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
ভাটারা থেকে আসা মাহাবুব হাসান বলেন, ‘ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। এখানে ভিড় ও খাবারের বৈচিত্র্য উপভোগ করি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় কি না, সেটা আসলে যাচাই করি না। অনেক সময় খাওয়ার পর বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে লোকজন, কিন্তু অভিযোগ জানানোর কোনো ব্যবস্থা নেই।’
গ্রিন রোডের ব্যাংকার সৈকত আলী দম্পতি বলেন, ‘হাঁসের মাংস খেতে এসেছিলাম। স্বাদে ভালো হলেও খাবার অতিরিক্ত ঝাল ছিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো খোলা জায়গায় খাবার রাখা হয়, ধুলোবালু পড়তে থাকে। পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে খাওয়া যায় না।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খোলা জায়গায় রান্না ও অতিরিক্ত মসলা-কেমিক্যালের ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণ। গ্যাসের আগুনে রান্না করা খাবারে কার্বন মনোক্সাইডসহ ক্ষতিকর উপাদান মিশে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে টেস্টিং সল্ট বা কৃত্রিম রং স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে মাথাব্যথা, স্নায়বিক সমস্যা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ায়।
অন্যদিকে হোটেল মালিকেরা বলছেন, পর্যটকের চাপ সামলাতে গিয়ে কিছু ত্রুটি রয়ে গেলেও তারা ঘরোয়া মসলা ব্যবহার করেন এবং প্রতিদিন তাজা হাঁস কেটে রান্না করেন। অনেকে অবশ্য ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চাননি, কেউ দায় এড়িয়ে গেছেন।
রূপগঞ্জ সেনিটারি ইনচার্জ মো. মাতিন জানান, ‘আমরা নিয়মিত তদারকি করি। তবে জনবলের সংকটে সব জায়গায় নজরদারি সম্ভব হয় না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আইভী ফেরদৌস বলেন, ‘পূর্বাচল পর্যটন নগরীতে পরিণত হলেও এখানকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। নিয়মিত অভিযান, জরিমানা এবং জনসচেতনতা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।’