ঢাকা শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নেপালে বিক্ষোভ

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান  নিয়ে ঐকমত্য হয়নি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৪০ পিএম

নেপালের চলমান রাজনৈতিক সংকট এখন এক নতুন মোড় নিয়েছে। জেন-জিদের নেতৃত্বে তিন দিনের ব্যাপক দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই গণবিক্ষোভে অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি এবং ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হওয়ার পর নেপালি সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নেপালের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের একজন নেতা নির্ধারণ করতে সেনাবাহিনী গতকাল বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল এবং জেন-জি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। নেপালে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজা রাম বাসনেট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘প্রাথমিক আলোচনা চলছে এবং আজও (গতকাল) তা চলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’

গতকালের আলোচনায় জেন-জিদের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। সুশীলা কারকি ছাড়াও নেপালের বিদ্যুৎ সংকট সমাধানকারী প্রকৌশলী কুলমান ঘিসিংয়ের নামও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে আলোচনায় এসেছে।

তবে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল গতকাল এক বিবৃতিতে নাগরিকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তিনি দেশের চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে উত্তরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো এখনো অস্পষ্ট মন্তব্য করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গতকালের বৈঠক এই সংকট সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।

নেপালে আন্দোলনের শুরুটা ছিল খুবই সাধারণ। উচ্চ বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত তরুণ সমাজ যখন তাদের আয়ের অন্যতম উৎস, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন- এক্স (পূর্বে টুইটার) এবং ইউটিউবের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানায়, তখন থেকেই উত্তেজনার শুরু। পরে সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ততক্ষণে আন্দোলন লাগামহীন হয়ে পড়ে। বিক্ষোভ ভয়ঙ্কর সহিংসতায় পরিণত হয়ে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মধ্য দিয়ে নেপালে সরকারের পতন ঘটে। নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত বিক্ষোভ-সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০। আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩৩ জন।

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর দেশে নেপালে কার্যত কোনো সরকার নেই। এই পরিস্থিতিতে নেপালি সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল জানিয়েছেন, যতক্ষণ না একটি নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।

এদিকে গতকাল রাজধানী কাঠমান্ডুসহ নেপালের বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় সেনারা টহল দিচ্ছেন। সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কাঠমান্ডু ও এর আশপাশের এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। তবে বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, নেপাল থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু আছে।

এদিকে গতকাল নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের একজন নেতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল এবং জেন-জি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিক্ষোভকারীরা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রমন কুমার কর্ন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, তার সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করেছিলেন।

অন্যদিকে সুশীলা কারকি ভারতীয় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল সিএনএন-নিউজ১৮কে বলেছেন, ‘তারা আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।’

সুশীলা কারকি ছাড়াও নেপালের বিদ্যুৎ সংকট সমাধানকারী প্রকৌশলী কুলমান ঘিসিংয়ের নামও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের প্রথম পছন্দ ছিলেন মেয়র বালেন্দ্র শাহ, তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় কুলমান ঘিসিং এবং সুশীলা কারকির নাম উঠে আসে।

সুশীলা কারকি নেপালের প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে পরিচিত। ৭৩ বছর বয়সি কারকি সৎ এবং নির্ভীক বিচারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। কাঠমান্ডু সিটি মেয়র বালেন্দ্র শাহও সুশীলা কারকির নাম সমর্থন করেছেন। তবে আন্দোলনকারীদের একটি ছোট অংশ তার বিরোধিতা করছে। তাদের যুক্তি, নেপালের সংবিধান অনুযায়ী সাবেক বিচারকদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুমতি নেই এবং কারকির বয়স বেশি।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে ঐকমত্য তৈরি না হলেও উদ্যোগ থেমে নেই মন্তব্য করে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল বলেছেন, ‘সম্মানিত নেপালি ভাই-বোনেরা, সংবিধানের সীমার ভেতরে থেকে গণতন্ত্র রক্ষা, শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আন্দোলনরত নাগরিকদের দাবি পূরণের পাশাপাশি সবাইকে সংযমের সঙ্গে শান্তি রক্ষায় সহযোগিতার আহ্বান জানাই’।