পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গণছুটি আন্দোলনের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান। এ বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈষম্য দূর করা ও হয়রানিমূলক পদক্ষেপ বন্ধসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কর্মীরা শিগগির কাজে যোগ না দিলে গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী গণছুটি আন্দোলনের মধ্যে নির্বাচনবিরোধী শক্তি থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হবে। আমাদের কাছে হাজার হাজার লোক আসছে আর বলছে, যারা গণছুটিতে গেছেন তাদের কাজগুলো তারা করতে চান। তাই আমাদের কাছে বিকল্প নেই ভাবার কোনো কারণ নেই আন্দোলকারীদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের আন্দোলন নিয়ে বৈঠক শেষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা তাদের (আন্দোলনকারী) সব দাবি দেখতে রাজি আছি, কিন্তু ছুটিতে থেকে কাজের ব্যাঘাত করলে তো আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। তাই আমরা মনে করি, গণছুটি করার কোনো প্রয়োজন নেই। সরকার কিন্তু যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। আগে যখন এটা হয়েছিল তখন কিন্তু বদলি এবং বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু গত ৭ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা কিন্তু সরকারের সহনশীলতার পরিচায়ক। কিন্তু কেউ এটাকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল করবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবস্থাটি পরিচালনার জন্য আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা আছে। হাজার হাজার লোক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিকল্প হিসেবে তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য। আমরা আশা করি, আমাদের এটা করতে হবে না। যারা আছেন, তারাই থাকবেন। এমন কোনো কাজ আপনারা করবেন না যাতে গণছুটি পল্লী বিদ্যুৎ গ্রহণ করতে বাধ্য না হয়। আমরা আশা করি, তারা অবিলম্বে কাজে যোগ দেবেন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, কোনোরকম নাশকতামূলক কাজ, অন্য সহকর্মীদের বাধা দেওয়ার মতো কোনো কাজ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যারা গণছুটিতে গেছে তাদের জন্য সরকার অনির্দিষ্টকাল ধরে অপেক্ষা করবে না। ছুটির তো প্রাপ্যতা থাকে। আন্দোলনকারীদের দাবি নিয়ে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সুতরাং তারা অবিলম্বে কাজে ফিরে আসবে। যদি না ফেরে তবে বিধি অনুযায়ী যে আইনানুগ ব্যবস্থা, সেটা আমরা নেব।
আন্দোলনকারী কর্মীদের সঙ্গে বসবেন কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ছুটিতে যে আছে তার সঙ্গে বসবেন কেন? কাজে থাকতে হবে, কাজে থাকলে তার সঙ্গে কথা হতে পারে। ছুটিতে থাকা লোকের সঙ্গে আপনি কীভাবে কথা বলবেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা আরও বলেন, সামনে নির্বাচন আছে। সবাই যে নির্বাচন চায় তা তো না। অনেকে নির্বাচনটাকে ব্যাহত করতে চেষ্টা করছে। সেসব শক্তি হয়তো এদের মধ্যে। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর মধ্যে এরাও (নির্বাচনবিরোধী শক্তি) হয়তো যোগ দিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আমরা কিন্তু সেটা মনে করি না। আমরা মনে করি পল্লী বিদ্যুতে যারা কাজ করেন তারা আমাদেরই অংশ। তারা হয়তো একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে বাইরে আছেন। তারা সহসাই ফিরে আসবেন। ফাওজুল কবির খান বলেন, তবে যদি কাজে ফিরে না আসেন, তবে ওই ধারণাটাই নিশ্চিত হবে যে, এর পেছনে অন্য কারো ইন্ধন আছে। আমরা কিন্তু সব ব্যবস্থা নিচ্ছি, যদি এটা না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, ইন্ধনের কথা (কাজে ফেরা) বলা হচ্ছে সেটা আছে।
প্রসঙ্গত, ৪ দফা দাবিতে গত রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণছুটিতে গেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত শনিবার বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।