বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল এবং ফরিদপুরে সীমানা পুনর্বহাল দাবিতে দ্বিতীয় দিনের হরতাল ও অবরোধ চলছে। বাগেরহাটে তিন দিনের হরতালসহ অফিস-আদালত ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি, বর্তমান সমন্বয়ক সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির কো-চেয়ারম্যান এম এ সালাম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে, বেঞ্চ পেতে, বাঁশ বেঁধে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন হরতালের সমর্থনকারীরা। সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির দাবি, জেলার বিভিন্ন সড়কের অন্তত ১৩৪টি স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবস্থান নেন নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা। যার ফলে বাগেরহাট জেলা কার্যত অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এমনকি আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থাও এক কথায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, দরটানা সেতুর দুই পাশ, ফতেপুর বাজার, সিএনবি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাকের সারি দেখা গেছে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও চালকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে হরতালের সমর্থন করে বাগেরহাট জেলাজুড়ে দোকানপাট খোলেননি ব্যবসায়ীরা। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে বুধবার সকালে শুরু হওয়া হরতালের সমর্থনে রাতেও সড়কে আগুন জ¦ালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে হরতালের সমর্থনকারীরা। যার ফলে রাতেও কোনো প্রকার গাড়ি চলাচল করেনি সড়ক থেকে। সাধারণ মানুষ বলছে রাতে সড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ।
গেল ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন বাগেরহাটবাসী। এরপরেও ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসনই জারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশনের এই আসন বিন্যাস গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ (বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা)ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)। দীর্ঘদিন থেকে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। তখনকার সীমানা: বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।
এম এ সালাম বলেন, বাগেরহাটে চারটি আসন ফিরে পেতে আমরা পাঁচ দিনের কর্মসূচি দিয়েছিলাম। আমাদের এই কর্মসূচি বাগেরহাটের সর্বস্তরের জনগণ পালন করেছে। সর্বস্তরের জনসাধারণ রাস্তায় নেমে আমাদের এই কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। আমাদের এই পাঁচ দিনের কর্মসূচি পরেও নির্বাচন কমিশন যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ফরিদপুরে রেলপথ অবরোধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ: ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুর-৪ আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দফায় টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশাপাশি এবার রেলপথ অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। ফলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক পথে ২১টি জেলার যানবাহন বন্ধ ছাড়াও রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রেলপথ অবরোধ শুরু হয়। ফলে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর জাহানাবাদ এক্সপ্রেস মুকসুদপুর রেল স্টেশনে থেমে আছে।
ভাঙ্গা রেলওয়ে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা রেললাইনের ভাঙ্গা উপজেলার কৈডুবি রেলগেটে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সকাল ৭টা থেকে রেলপথ অবরোধ শুরু হয়। খুলনা থেকে ঢাকাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকো রিভার্স করা হয়েছে মুকসুদপুর স্টেশনে। বিকল্প পথ হিসেবে ট্রেনটি কাশিয়ানী জংশনে গিয়ে কাশিয়ানী থেকে বোয়ালমারী হয়ে কালুখালী দিয়ে রাজবাড়ী অথবা যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা যেতে হবে। এ ছাড়া বেনাপোলগামী রূপসী বাংলা ট্রেনটি এ পথে আসা বন্ধ করা হয়েছে।
ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের সহকারী ম্যানেজার মোহাম্মদ সাকিব আকন্দ বলেন, খুলনা থেকে ঢাকাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ভাঙ্গায় ৮টা ১৫ মিনিটে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু রেললাইন অবরোধের কারণে ট্রেনটি ভাঙ্গা পৌঁছতে পারেনি। মুকসুদপুর এলাকায় অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ শাবুর হোসেন বলেন, ঢাকাগামী জাহানাবাদ ট্রেন মুকসুদপুর এলাকায় আটকা পড়েছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অবরোধকারীরা অবরোধ না তুললে বা পরিস্থিতি শান্ত না করা পর্যন্ত রেল চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত কয়েক দিনে ভাঙ্গায় একাধিকবার মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও হাইকোর্টে রিট দায়ের করা এবং রেলপথ অবরোধ করা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন