নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপি আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী ও বহিষ্কৃত সদস্যসচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়া গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম ইদন মিয়া (৬০), তিনি মুরাদনগর গ্রামের বাসিন্দা। আহতরা হচ্ছেন মোস্তাকিম (৩০), আবুল মিয়া (৬২), শাহ আলম (৩৮) ও রাকিব মিয়া (৩০)। আহতদের প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতাল এবং পরে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পরে আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেলে সেখানে বিএনপির দুটি পক্ষকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। একটি পক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী, অপর পক্ষে সদ্য বহিষ্কৃত সদস্যসচিব আবদুল কাইয়ুম মিয়া নেতৃত্ব দেন। মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি দলীয় পদ থেকে বহিষ্কৃত হন আবদুল কাইয়ুম। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে তার সক্রিয় থাকার বিষয়টি মানতে পারছিল না শাহ আলম পক্ষ।
অভিযোগ আছে, আবদুল কাইয়ুমকে ঠেকাতে শাহ আলম চৌধুরীর ইন্ধন ও হস্তক্ষেপে আওয়ামী নেতাকর্মীদের আবার এলাকায় ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়। এর অংশ হিসেবে গতকাল ভোর ৫টার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে এলাকায় ফিরতে শুরু করেন আত্মগোপনে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ খবর পেয়ে আবদুল কাইয়ুমের সমর্থকেরা বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষ ট্যাটা, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ইদন মিয়াসহ অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ইদন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
যদিও স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, পলাতক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই হামলার জন্য দায়ী। তবে আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের লোকেরা এ ঘটনা ঘটায়নি। বিএনপির লোক কর্তৃক বালুমহাল থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ এলাকার নিরীহ লোকদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করায় এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।
আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির বহিষ্কৃত সদস্যসচিব কাইয়ুম সরকার বলেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার দিন রাতে তারা পুনরায় এলাকায় এসে জড়ো হন এবং আমাদের লোকদের ওপর হামলা চালায়। এতে করে ইদন মিয়া নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং আরও চারজন মারাত্মকভাবে আহত হন।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদের একজন ইউপি সদস্য বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিএনপির নেতাকর্মীরা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করতেন এবং তাদের অত্যাচারে অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতেন। কাইয়ুম সরকারকে বহিষ্কার করার সুযোগে আওয়ামী লীগের লোকজন পুনরায় এলাকায় এসে জড়ো হন এবং ঘটনার দিন তারা বিএনপির লোকদের ওপর হামলা চালান।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমদাদুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন