ভাত ছাড়া বাঙালির একবেলা খাবারও যেখানে অসম্পূর্ণ, সেখানে জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত ভাত, পোলাও, বিরিয়ানি কিংবা খিচুড়ি এজাতীয় কোনো খাবার একবারের জন্যও মুখে তোলেননি গাজীপুরের শামসুদ্দিন (৬০)। তবু তিনি অন্যদের মতোই সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের ঘোষেরকান্দি গ্রামের মৃত ছবিরউদ্দিনের ছেলে শামসুদ্দিনের জন্ম ১৯৬২ সালে একই গ্রামের নানাবাড়িতে। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি বড়। শৈশব থেকেই তিনি নানাবাড়িতেই বেড়ে উঠেছেন।
শিক্ষাজীবনে ১৯৭৮ সালে টোক রনেন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৮০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৩ সালে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার পিআইও অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি শুরু করলেও ১৯৯০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় হাতে আঘাত পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেন।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার তোতামিয়া ও মোর্শেদ জানান, ছোটবেলা থেকেই শামসুদ্দিন ভাত পছন্দ করতেন না। এমনকি ভাতের গন্ধ পেলেই তিনি বমি করে ফেলতেন। পরিবারের সদস্যরা নানা চেষ্টায় ভাত মুখে তুলে জোর করে এমনকি প্রলোভন দিয়েও তাকে ভাত খাওয়াতে পারেননি।
স্থানীয় বিপুল ম-ল বলেন, ‘চাচা ভাত ছাড়া সবকিছু খায়। টাকা দিয়েও তাকে ভাত খাওয়ানো যায়নি।’ পরিবারের সদস্যদের ভাত খাওয়ার সময় শামসুদ্দিন সাধারণত ঘরের বাইরে থাকেন বা দরজা বন্ধ করে আলাদা ঘরে থাকেন, যেন গন্ধ না আসে।
শামসুদ্দিন জানান, ভাত দেখলেই তার শ্বাসরোধ হওয়ার মতো অনুভূতি হয়, বমি আসে। ভাতকে তিনি নিজের ‘চিরশত্রু’ মনে করেন। আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াতে গেলে নিজে তৈরি করে আটার রুটি নিয়ে যান এবং মাছ-মাংস-সবজি আলাদাভাবে বসে খান। এমনকি তার খাবারের থালা-বাটি-গ্লাসও আলাদা রাখা হয়।
ভাত না খাওয়ার কারণে কোনো শারীরিক সমস্যা হতে পারে কি না এ প্রশ্নে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবীবুর রহমান বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য ভাত খাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। চালজাতীয় অন্যান্য খাবার যেমন পিঠা, মুড়ি, চিড়া, থেকেও পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট পাওয়া সম্ভব। তাই ভাত না খেলেও শারীরিক জটিলতা না-ও হতে পারে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন