উজানে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি এবং দেশের ভেতরে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। এতে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে নি¤œাঞ্চল। পানি যেকোনো মুহূর্তে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই বিভাগের দুধকুমার ও ধরলা নদ-নদীর পানিও আগামী দুই দিন দ্রুত বাড়তে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার এসব নদ-নদীসংলগ্ন এলাকায় সাময়িক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। গতকাল রোববার সকালে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া সতর্কবার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, হঠাৎ বৃষ্টির কারণে তিস্তা ও অন্য নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। এতে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে দুই দিন পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বৃষ্টিও কমে আসতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ভেতরে রংপুর বিভাগে এবং উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে এবং সংলগ্ন উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি আগামী দুই দিন দ্রুত বাড়তে পারে। এসব নদ-নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদ-নদীসংলগ্ন নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
উত্তরের এসব নদ-নদীর পাশাপাশি সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস নদ-নদীর পানি আগামী দুই দিন বাড়তে পারে। এসব নদ-নদীর কাছাকাছি নি¤œাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। উত্তরের আরও কয়েকটি নদ-নদী যেমনÑ করতোয়া, যমুনেশ্বরী, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, আত্রাই, আপার-আত্রাই, মহানন্দা, ঘাঘটের পানিও আগামী দুই দিন বাড়তে পারে।
তিন দিন আগে বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নি¤œচাপের সৃষ্টি হয়। পরে এটি স্থল গভীর নি¤œচাপ হয়। তবে গত শনিবার থেকেই এটি দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। নি¤œচাপটি এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বিহার রাজ্যে অবস্থান করছে। তবে এর প্রভাব পড়েছে ভারতের এসব রাজ্যসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে। রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বড় এলাকাজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে গতকাল রোববার বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার), যা বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ০.৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকে চলাচলের রাস্তাঘাটসহ মানুষজন পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে। এদিকে তিস্তার চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন বন্যা ও নদীভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮-১০টি চর, পাটগ্রাম উপজেলা দহগ্রাম, আদিতমারী উপজেলা চর গোবর্ধন, মহিষখোঁচা এবং সদর উপজেলা খুনিয়াগাছ, রাজপুর ও গোকু-া ইউনিয়নের চর এবং নি¤œাঞ্চলের এলাকাগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ০.৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি আরও বাড়তে পারে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তার নি¤œাঞ্চলের মানুষদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন