ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

বললেন মির্জা ফখরুল

গণঅভ্যুত্থানে দেশ গড়ার সুযোগ এসেছিল, এখন অনৈক্যের সুর

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১২:৫৭ এএম

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্য দেশের রাজনীতিবিদরা ‘হারিয়ে ফেলছেন’ বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পরে এত বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশটাকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলবার। কিন্তু আমরা চারদিকে দেখছি, আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন, অনেকে চলে যাচ্ছেন। চারদিকে দেখছি, একটা অনৈক্যের সুর। তখন আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি।’

এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দিতে মাসিক ম্যাগাজিন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’র উদ্যোগে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠান হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ তোমাকে ডাকছে। আজকে তোমরা যারা যৌবনে পা দিচ্ছ, নতুন পৃথিবীতে পা দিচ্ছ, সেই পৃথিবী তোমাদের ডাকছে। যে কথাটা ডক্টর সুবর খান বলেছেন, নিজেকে তৈরি করতে হবে পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে। তুমি যদি টিকতে না পার, তুমি নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। সেই জায়গায় তোমাকে পৌঁছাতে হবে। তারপরে তোমাকে তৈরি হতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সেরকম তো নেই, বরং অত্যন্ত নিম্নমানের। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই, এর জন্য দায়ী আমরাই, এর জন্য দায়ী আমাদের আমলাতন্ত্র। এখানে শিক্ষার ওপরে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বিএ পাস করি, এমএ পাস করি। চাঁদপুরের গ্রাম থেকে অথবা আমার ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রাম থেকে, সে ঘুরে বেড়ায় কোনো কাজ পায় না। কারণ বিএ পাস, এমএ পাসকে চাকরি দিতে পারেন না। কিন্তু সে যদি বিএসসি পাস করত, অথবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটা ডিপ্লোমা নিতে পারত ইলেকট্রিসিটির ওপরে অথবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপরে অথবা অন্যান্য বিষয়ের ওপরে, তাহলে কিন্তু তার চাকরি কেউ আটকাতে পারত না। এই যে নীতির ব্যাপারটা, এখানেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।’

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের স্যাররা আন্দোলন করছেন, রাস্তায় আছেন শিক্ষকদের বেতনের জন্য। এটা তো অনেক ভালো হতে পারত যদি আমরা পুরোপুরি এটাকে পরিবর্তন করে শুধু অতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা এবং আমাদের বেশির ভাগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারতাম। আজকে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নাই, তার কোনো ইনস্টিটিউট নাই। ভোকেশনাল সেন্টারগুলো নাই। আমরা এগুলো তৈরি করি না। আমরা বিএ পাস, এমএ তৈরি করছি। তাহলে এ তরুণরা বিকশিত হবে কীভাবে।’ মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপরে জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

এখন ক্রান্তিকাল চলছে, ট্রানজিশনাল পিরিয়ড খুব অস্থিরতা আছে। এই অস্থিরতাকে এই যে এখানে তো সব ‘জেন জি’, তাই তো? নাকি ভুল বলছি। ওদের (জেন জি) চিন্তা, ওদের ভাবনা এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। কারণ বয়স, প্রজন্মের যে পার্থক্য, এটা অস্বীকার করার তো উপায় নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাশেদা বেগম হীরা যখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে হিজবুল বাহারে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়েছিলেন এবং তাকে সমুদ্র সম্পর্কে জানানো হয়েছে সেখানে, তখনকার সময় আর এখনকার সময় তো এক নয়। এখন ওরা ওই যে ছোট্ট সেট (মোবাইল সেট), সেই সেটের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে পেয়ে যায়। ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে, এটা আমাদের বুঝতে হবে। এই জানা, এটাকে ব্যবহার করা, এটাই কিন্তু মঙ্গলের জন্য, ধ্বংসের জন্য নয়।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘তোমাদের জন্য আমাদের দোয়া, তোমাদের জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক প্রার্থনা আল্লাহতালার কাছে। আল্লাহতালা তোমাদের যেন সঠিকভাবে মানুষ হওয়ার মতো তৈরি করেন। একটা দেশে এ মানুষ হওয়াটাই সবচেয়ে বড় কাজ।’

বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদ, শিক্ষাবিদ এম এ সাজ্জাদ, জমিরুল আকতার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক কবীর হোসেন, সদস্য সচিব কাজী শওকত হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের অধ্যাপক সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মুন্সীগঞ্জ বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেনসহ কৃতী শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।