- এ যাত্রায় ফিরলেন প্রতারণার শিকার ৩০৯ জন
লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি ও আশপাশের এলাকা থেকে অবৈধভাবে অবস্থানরত ৩০৯ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাা (আইওএম) যৌথ প্রচেষ্টায় এই প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হয়। গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশে ফেরতদের প্রত্যেকের মুখেই ছিল তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা। তাদের অভিযোগ, লিবিয়ায় মাফিয়া চক্র নিয়ন্ত্রণ করে খোদ বাংলাদেশিরাই।
প্রতারণার শিকার সৈয়দ আলম নামে এক যুবক জানান, লিবিয়ায় তিন বছর ছিলেন। মাফিয়াদের হাতে ধরা পড়েও চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে রক্ষা পান সে-যাত্রায়। তিনি জানান, বড় বড় কাজ আছে বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল কন্ডাক্টরি করি যাবে বা অন্য কাজ করলে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে। অনেকটা একই গল্প হাফিজুর রহমানের। গুলি করে দরজা ভেঙে থাকার জায়গা থেকে তাদের সাতজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে দাবি করা হয় ৭০ লাখ টাকা। সেই মুক্তিপণ দিয়েই ফিরলেন তিনি। আর ভাইকে পেয়ে আবেগঘন হয়ে পড়েন তার বোন।
হাফিজুরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই মাফিয়া কারা। তিনি বলেন, এরা সবাই বাংলাদেশি। আমাদের সাতজনের একেকজনের কাছ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়। হাফিজুর ছাড়াও সবার মুখেই লিবিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি আর মাফিয়া এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। অভিযোগ, সেই সব মাফিয়া চক্র পরিচালনা করেন বাঙালিরাই।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই উদ্যোগে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, লিবিয়া সরকার এবং আইওএম একসঙ্গে কাজ করেছে। ফিরে আসা বাংলাদেশিদের বহনকারী বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটটি ফ্লাই ওয়া ইন্টারন্যাশনাল পরিচালনা করে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইওএমের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ফিরে আসা নাগরিকদের অধিকাংশই মানব পাচারকারীদের প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন, যাদের অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। লিবিয়ায় অবস্থানকালে অনেকেই অপহরণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়।
প্রত্যেক প্রত্যাবাসিতকে আইওএম খাদ্যসামগ্রী ও প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং অন্যরা যাতে একই ধরনের পাচারের শিকার না হন।
বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে থাকা অবশিষ্ট বাংলাদেশিদেরও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে কাজ করছে।
কর্মকর্তারা সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার ও কল্যাণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ এবং মানব পাচার প্রতিরোধ ও বিপদগ্রস্ত অভিবাসীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, একই প্রক্রিয়ায় আগামী ৩০ অক্টোবর মিসরাতা ও ত্রিপলি থেকে নিবন্ধিতদের মধ্যে আরও তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য লিবিয়া সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে দূতাবাস। এর আগে ৯ অক্টোবর প্রথম দফায় ৩০৯ জন দেশে ফেরেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন