- এক যুগ ধরে চিকিৎসাহীন, অভাবে দিন কাটছে রাজশাহীর পুঠিয়ায়
২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাঙ্গালপাড়া গ্রামের ময়না বেগম। কিন্তু সেই বেঁচে থাকাই আজ তার জন্য অসহনীয় বোঝা। দুর্ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও থেমে নেই যন্ত্রণা, বরং অভাব, অবহেলা আর চিকিৎসাহীনতায় দিন কাটছে মৃত্যুর অবর্ণনীয় কষ্টে।
ঢাকায় জীবিকার আশায় গিয়েছিলেন ময়না বেগম। সাভারের রানা প্লাজায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তিনি। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তার সব স্বপ্ন। ভবন ধসে আহত হয়ে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি হয়েছিলেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। টানা দুই মাস চিকিৎসা শেষে ফিরে আসেন। কিন্তু এরপর অর্থাভাবে থেমে যায় চিকিৎসা। তার পর থেকেই শুরু হয় তার দীর্ঘ দুর্ভোগের পথচলা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুঠিয়ার বাঙ্গালপাড়া গ্রামের এক কোনায় নড়বড়ে একটি ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ময়না বেগম। স্বামী, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকা, একই ঘরে অসুস্থতা, ক্ষুধা ও হতাশার সংসার। তার শরীরের পুরোনো আঘাতগুলো এখন আরও বেড়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ময়না বলেন, ‘এক যুগের বেশি সময় ধরে চিৎকার করছি, কেউ শোনে না। এমন বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।’
স্বামী বাবু বলেন, ‘আমি পঙ্গু কার্ড করেছি, কিন্তু কোনো ভাতা পাই না। কাজকর্ম করতে পারি না, খাবারও জোটে না। স্ত্রীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে।’
প্রতিবেশী হাফেজ আলী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, তবু মাঝেমধ্যে সাহায্য করি। কিন্তু এটা তো স্থায়ী সমাধান নয়। সরকার যদি একটু সাহায্য করত, তারা হয়তো বাঁচতে পারত।’
ভূমিহীন পরিবারটি এখন দারিদ্র্য আর ঋণের চাপে প্রায় নিঃস্ব। এনজিওর কিস্তির বোঝায় দিশাহারা, খাবার জোটাতে হিমশিম।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত সালমান বলেন, ‘আমরা তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করব এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা দেওয়া হবে।’
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা এই নারী আজ আবার মৃত্যুর মুখে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে হয়তো আবারও বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবেন ময়না ও তার পরিবার।

