৭৪তম মিস ইউনিভার্স জিতলেন মেক্সিকোর ফাতিমা বশ। ১২১ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে মিস ইউনিভার্স ২০২৫ খেতাব জিতে নিয়েছেন তিনি। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত জমকালো মেগাফাইনালে তার মাথায় মিস ইউনিভার্সের মুকুট পরিয়ে দেন গতবারের বিজয়ী ডেনমার্কের ভিক্টোরিয়া কিয়ের থেইলভিগ। গতকাল শুক্রবার সকালে থাইল্যান্ডের ননথাবুরি, পাক ক্রেটে অবস্থিত ইমপ্যাক্ট চ্যালেঞ্জার হলের প্রদর্শনী ও কনভেনশন মেগাসেন্টারে তাকে মিস ইউনিভার্স পরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়।
এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হয়েছেন থাইল্যান্ডের প্রাভিনার সিং। এ ছাড়া ভেনিজুয়েলার স্টেফানি আবাসালি, ফিলিপাইনের আহতিসা মানালো এবং আইভরি কোস্টের অলিভিয়া ইয়াসে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছেন।
মেক্সিকোর তাবাস্কো অঙ্গরাজ্যের সান্তিয়াগো দে তেয়াপায় জন্ম ফাতিমার। তিনি মেক্সিকোয় ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ইতালির মিলান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্টেও থেকেছেন কিছুদিন।
নিজের দুর্বলতাকেই তিনি শক্তিতে পরিণত করেছেন। স্কুলজীবনে ডিসলেক্সিয়া ও এডিএইচডির কারণে বুলিংয়ের শিকার হওয়ার কথা তিনি খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেছেন। ২০১৮ সালে তাবাস্কোয় ‘ফ্লোর ডি ওরো’ খেতাব জয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার পথচলা।
সব প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রাখেন ফাতিমা। তিনি ইউএস উইকলিকে বলেন, ‘যারা সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। লোরেনা, ফের্নান্দা পুমা, এমিরে আর এলেনাÑ তারা প্রত্যেকেই প্রকৃত অর্থে রানি।’
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ইতিহাস গড়ে তাবাস্কো থেকে প্রথম হিসেবে ‘মিস ইউনিভার্স মেক্সিকো’ খেতাব জিতে নেন। এই জয়ের পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তোলেন ফাতিমা। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ লাখ ৯০ হাজারের বেশি; আর টিকটকে ৬ লাখ ৯০ হাজার।
‘মিস ইউনিভার্স’ প্ল্যাটফর্মের বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে সমাজসেবা ও মানবকল্যাণ। ফাতিমা এ ক্ষেত্রেও নিজের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন। ৯ বছর ধরে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।
বিশ্বের অন্যতম এই মর্যাদাপূর্ণ আসরে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন তানজিয়া জামান মিথিলা। ১২২টি দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন সেরা ৩০-এ।
জামদানি শাড়িতে দেখা গেছে মিথিলাকে। গত ১৯ তারিখে ‘মিস ইউনিভার্স’-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তার একটি ছবি প্রকাশ করে মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকে বাংলাদেশি মেডিয়ায় শোরগোল পড়ে। মিথিলা জানান, তার এই যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। প্রিলিমিনারি রাউন্ড থেকেই নিজের আত্মবিশ্বাস ও সৌন্দর্য দিয়ে বিচারকদের নজর কাড়েন তিনি। বিশেষ করে প্রিলিমিনারি পর্বে নীল রঙের বিকিনিতে সুইমস্যুট রাউন্ডে তার উপস্থিতি ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষীদের প্রশংসা কুড়ায়। ‘পিপলস চয়েস’ ভোটিংয়েও তিনি বেশ এগিয়ে ছিলেন, যদিও ভোটিং নিয়ে তার কিছুটা হতাশা ছিল।
এক ভিডিও বার্তায় মিথিলা বলেন, ‘আমার জাতীয় পোশাকে আমি জামদানির সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং আমাদের তাঁতিদের সূক্ষ্ম কারুকার্যকে মূর্ত করে তুলেছি। মসলিনের ঐতিহ্য এবং ঐতিহ্যবাহী সোনার গয়নার জাঁকজমক আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আমি একটি রাজকীয় জাতির প্রতিনিধিত্ব করি। আমাদের জাতীয় ফুল জললির মতো আমিও শান্তি ও বিশুদ্ধতার বার্তা বহন করে এই বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে আছি।’
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ভোটিংয়ে এগিয়ে থেকেও কেন সেরা ত্রিশেই থামতে হলো? আসলে মিস ইউনিভার্সের মতো আসরে কেবল দর্শকের ভোটই যথেষ্ট নয়, সেরা ৩০ বা পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগীর পারফরম্যান্স, বুদ্ধিমত্তা, বাচনভঙ্গি, সর্বোপরি বিচারক বা জুরি বোর্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ মূল ভূমিকা পালন করে। এই সামগ্রিক মানদ-ে নির্ধারিত হয় বিজয়ীদের তালিকা।

