- বাসিন্দাদের দাবি নাশকতা
- প্রাথমিকভাবে কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি
রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। আগুনের লেলিহান শিখায় ওই এলাকার পুরো আকাশ লাল হয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে লাগা এই আগুন দ্রুত বস্তির ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ায় ভয়ংকর আকার ধারণ করে। বাসিন্দারা জানমাল বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তবে রাস্তা সরু এবং লোকজনের ভিড়ের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীকে অনেক বেগ পেতে হয়। রাত ৮টার দিকে এ খবর লেখা পর্যন্ত পুরো বস্তিতে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লছে। প্রাথমিকভাবে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। পাওয়া যায়নি হতাহতের খবরও। তবে এই অগ্নিকা-কে নাশকতা বলে দাবি করেছেন বস্তির বাসিন্দারা। আগুন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে বস্তির বাসিন্দারা ঘরের আসবাবপত্রসহ যে যেভাবে পারছেন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানী লাগোয়া প্রায় ৯০ একর জায়গার ওপর ১০ হাজার ঘর রয়েছে এই বস্তিতে। ফায়ার সার্ভিস-সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা ধারণা করছেন, আগুনে হাজারখানেক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে আগুন নির্বাপণের পরে ক্ষয়ক্ষতি ও ঘরের সংখ্যা জানা যাবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ওই বস্তিতে বসবাসরতদের অনেকেই হিটারে রান্না করেন। অনেকের রয়েছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক শট সার্কিটের কারণেও প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। ঘনবসতি হওয়ায় সামান্য আগুন অনেক সময় বড় আকৃতি নেয়। সামান্য আগুন নেভানোর মতো ব্যবস্থাও না থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যায়। এতে ঘটে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি। এর আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে কড়াইল বস্তিতে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি যথারীতি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়ে সুপারিশমালা প্রণয়নের পরও একের পর এক অগ্নিকা-ের ঘটনা সেখানে ঘটেই চলেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে ওই বস্তিতে আগুন লাগার খবর পান তারা। তিনি বলেন, আগুনের খবর পেয়ে প্রথম ধাপে সাতটি ইউনিট পাঠানো হয়। কিন্তু সড়কে যানজটের কারণে ইউনিটগুলো সময়মতো পৌঁছাতে পারেনি। সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে সেখানে পৌঁছায়। দ্বিতীয় ধাপে পাঠানো হয় আরও চারটি ইউনিট। এগুলো পৌঁছায় ৬টা ২৫ মিনিটে। তৃতীয় ধাপে আরও পাঁচটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। এরপর চতুর্থ ধাপে আরও তিনটি ইউনিট পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকা-ের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা সম্ভব হয়নি।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, বস্তিটির মাঝ বরাবর অংশে আগুন দাউ দাউ করে জ¦লছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। গুলশান-১-এর লেক বরাবর বস্তির অংশের প্রায় পুরোটাতেই আগুন জ¦লছে। এ খবর লেখা পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বস্তিবাসী যে যার মতো নিরাপদে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ কিছু মালামাল সরিয়ে নিতে পারলেও অনেকের পক্ষেই হয়তো তা সম্ভব হয়ে উঠবে না।
বস্তির এক বাসিন্দা জানান, এখানে সমস্যা হচ্ছে, মানুষ প্রচুর। আগুন লাগছে অনেকক্ষণ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। একে তো ভিড়, অন্যদিকে রাস্তা অনেক সরু। ফলে ফায়ারের গাড়ি ঢুকতে বেগ পোহাতে হচ্ছে।
রাতুল নামে এক বাসিন্দা জানান, ঘরের ভেতরে সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেকেই ঘরের টিন ও আসবাবপত্র খুলে নিয়ে যাচ্ছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্থানীয়রাও।
অপর এক বাসিন্দা জানান, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কেউ নাশকতার জন্য আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। এর আগেও এখানে অনেকবার আগুন লেগেছে, কিন্তু এবারের আগুনের সূত্রপাত ও ভয়াবহতা দেখে মনে হচ্ছে কেউ গানপাউডার-জাতীয় কিছু ছুড়ে দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে ফায়ার সার্ভিসের তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আগুনের মধ্যেও অসংখ্য লোক তাদের ঘরের আসবাপত্র নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। অনেককে আবার শেষ রক্ষার জন্য ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ওই বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে যায় ডজনখানেক ঘর। গেল বছরের ২৪ মার্চ ও ১৮ ডিসেম্বরেও আগুনে পোড়ে কড়াইল বস্তি। প্রায় প্রতিবারই ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বস্তিতে ঢোকার রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বেগ পেতে হয়। টিন, বাঁশ, কাঠের ঘরগুলো গায়ে গা লাগিয়ে ওঠানো হয়েছে; যার কারণে এখানে আগুন লাগলে দ্রুত ছড়ায়।
কড়াইল বস্তির জমির মূল মালিক বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটি আদালতের আদেশ নিয়ে ২০১২ সালে কড়াইলে জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। প্রথম দিনের অভিযানে শ-খানেক ঘর উচ্ছেদ করতে তারা সফল হলেও দ্বিতীয় দিনে থেমে যায় অভিযান। সেদিন হাজার হাজার বস্তিবাসী গুলশান-মহাখালী এলাকার সড়কে নেমে এলে অচল হয়ে যায় ওই এলাকা। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে গড়ে ওঠা এই বস্তি গার্মেন্ট শ্রমিক, শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের অসংখ্য মানুষের ঠিকানা। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এই বস্তি মাদকের কারবারিসহ অবৈধ বিভিন্ন কাজের অন্যতম আখড়া বলে পরিচিত।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন