ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

জিনের বাদশাহে মুশকিল আসান, অবশেষে গ্রেপ্তার

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০২:৪৪ এএম
  • ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা। চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় গুরু পরিচয়ে মানুষের ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের আশ^াস দিয়ে দেওয়া হয় বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপন দেখে যেসব ব্যক্তি যোগাযোগ করেন তাদের সমস্যার সমাধান করার কথা বলে প্রথমে সামান্য অর্থ নেয়। এরপর জিনের বাদশাহ সেজে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে যত টাকা পর্যন্ত আদায় করা যায় তা হাতিয়ে নেয়। ‘কোরআনিক শিফা’ নামক ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে এভাবে প্রতারণা চালিয়ে আসা চক্রটি শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের কাছ থেকে বেশ চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে। কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে চক্রের সদস্যরা গত কয়েক বছরে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়।

প্রতারিত হওয়া এক নারীর করা মামলার সূত্র ধরে নিউমার্কেট থানা ঢাকা ও যশোরে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার। রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানিয়ে নিউমার্কেট থানা পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করে। জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন না পাওয়ায় পরে তাদের জেলে পাঠানো হয়।

নিউমার্কেট থানার ওসি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, গত ১৯ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক নারীর অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করার আশ^াস দিয়ে ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই নারী মামলা করেন। পরে অভিযান চালিয়ে রাকিব মাতব্বর, আলাউদ্দিন ব্যাপারী, মহিউদ্দিন ব্যাপারী, মানিক, ফরহাদ হোসেন ও মেহেদী হাসান নামের ৬ জনকে  গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় প্রতারণায় ব্যবহৃত ১৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ফোন ঘেঁটে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী পাওয়া যায়, যাদের কাছ থেকে এ চক্র বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পুলিশ ওই সব ভুক্তভোগীকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার এসআই ফিরোজ আলম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এদের কারো ধর্মীয়ভাবে কোরআন বা হাদিসের কোনো জ্ঞান নেই। নিজেরাই ‘কোরআনিক শিফা’ নামক ফেইসবুক পেইজ খুলে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানে স্বামী স্ত্রীর অমিল, অবাধ্য সন্তান, চাকরি না পাওয়া, শত্রুকে বশে আনা ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করার আশ^াস দেওয়া হয়। পেইজে দেওয়া নম্বর দেখে যারা যোগাযোগ করেন তাদের টার্গেট করে প্রথমে হাদিয়া হিসেবে স্বল্প পরিমাণ অর্থ নেয়। কিন্তু চক্রের অন্য সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিদের ফোন করে কখনো জিনের বাদশাহ, কখনো বা ভিন্ন পরিচয়ে ক্ষতি হওয়ার ভয় দেখিয়ে ধাপে ধাপে টাকা নিতে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত পারে টাকা নেয়। কেউ বুঝতে পারলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৯ আগস্ট এলিফ্যান্ট রোডের ভাড়া বাসায় অবস্থানকালে ভুক্তভোগী নারী ‘কোরআনিক শিফা’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজে ‘অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করার উপায়’ শিরোনামের ভিডিও দেখে সেখানে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করেন। নিজেকে তান্ত্রিক পরিচয় দিয়ে চক্রের এক সদস্য জানায়, জিনের মাধ্যমে তার সন্তানের সমস্যা সমাধান করা হবে। প্রথমে বিভিন্ন সামগ্রী কেনার অজুহাতে ৫ হাজার ৫০০ টাকা নেয় তারা। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ‘কালো জাদু’র ছবি পাঠিয়ে কাজ চলছে বলে জানায়। পরদিন ‘জিন’ পরিচয়ে চক্রের আরেক সদস্য ভয় দেখিয়ে সন্তানের বিপদের কথা বলে ৪৯ হাজার টাকা দাবি করে। সন্তানকে রক্ষার আশায় ভুক্তভোগী টাকা পরিশোধ করেন। এরপর ২১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশলে মোট ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১০৫ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন। এজাহার গ্রহণের পর এসআই মো. ফিরোজ আহম্মেদের নেতৃত্বে প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় জিগাতলা-রায়েরবাজার এলাকা থেকে পাঁচজনকে এবং বৃহস্পতিবার ভোরে যশোরের চৌগাছা থানার যাত্রাপুর এলাকা থেকে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১১টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও দুটি বাটন ফোন জব্দ করে পুলিশ। গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।