শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরজাত হোসেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

কবিতায় ছন্দ, ছন্দে দ্বন্দ্ব

আরজাত হোসেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

কবিতায় ছন্দ, ছন্দে দ্বন্দ্ব

পূর্বের যে সাহিত্য এখন আধুনিক যুগে এসে পৌঁছেছে তার মধ্যে সাহিত্যের পর্যায়ক্রম ও ধারা পরিবর্তনের অনেক ধাপ পার হতে হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগের সূচনা, রবীন্দ্র-পর্ব, আধুনিক যুগ উত্তর-আধুনিক বা সমকালীন যুগ। বলতে গেলে সব যুগেই কবিতায় ছন্দ প্রয়োগ হয়ে আসছে, এখনো হচ্ছে এবং পরবর্তী সময়েও ছন্দের ব্যবহার থাকবে। উল্লেখ্য, প্রাচীন যুগের চর্যাপদ, মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য, আধুনিক যুগের সূচনায় সনেট ও মহাকাব্য সবখানেই ছন্দের নিপুণ ব্যবহার দেখা যায়। এর পরেই আসে সাহিত্যের স্বর্ণযুগ অর্থাৎ রবীন্দ্র-পর্ব (১৮৭০-১৯৪১) । তারপর থেকেই শুরু হয় আধুনিক ধারা, কবিতায় গদ্য রীতি। এই উত্তরাধুনিক ধারায় এসেও কবিতায় ছন্দ বিরাজমান। গদ্য এবং পদ্যকে আলাদা করার জন্যই মূলত এই ছন্দ। কিন্তু আধুনিক যুগে অনেকের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে ছন্দ আসলে কী তা নিয়ে। অনেক কবিগণ বলে ছন্দ হচ্ছে- কবিতার নির্দিষ্ট মাত্রামিল, অন্ত্যমিল, পর্ব, গঠন, তাল, লয়। এক কথায় পঙক্তির একটি গাণিতিক হিসাবকে ছন্দ বলে। অপরদিকে অন্য একদল কবি বলেন– ছন্দ মানে গাণিতিক বিন্যাস নয়, ছন্দ হচ্ছে যেটা অনুভব করা যায়, ভাষার জড়তা থেকে বাক্যকে মুক্তি দেওয়া। অবশ্য এই কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বলেছিলেন। এই  একই দ্বন্দ্বে আপনি এবং আমিও।

তাহলে ছন্দ আসলে কী?

ছন্দ হলো কবিতার সুরের নিয়মিত গতি। অর্থাৎ শব্দ, মাত্রা, বিরতি ও উচ্চারণের এমন এক বিন্যাস, যাতে কবিতা পড়লে কানে তালের মতো সঙ্গতি শোনা যায়। এ ছাড়া আরও প্রশ্ন আসে, যেমন ছন্দে যদি মাত্রামিল, অন্তমিল থাকতেই হয়, তাহলে আধুনিক যুগের গদ্য কবিতায় কীভাবে ছন্দ প্রয়োগ করব? কোথায় কীভাবে কোন ছন্দ প্রয়োগ করব? এসব প্রশ্নের উত্তর আমি ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব। তার আগে দ্বন্দ্বে জড়িত দুপক্ষের  ছন্দকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করা যাক।

পক্ষ ০১

এটা হলো প্রচলিত বা নিয়মিত ছন্দ, যেখানে কবিতার প্রতিটি পঙক্তি নির্দিষ্ট তাল, মাত্রা বা অক্ষরসংখ্যা মেনে চলে। অর্থাৎ শব্দগুলো সুরে সুরে, নিয়মে নিয়মে সাজানো থাকে। একে বলে ‘ছন্দবদ্ধ কবিতা।’ এখানে প্রতিটি লাইনে একইরকম তালের সুর ও মাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে। যুগ যুগ ধরে চর্যাপদ থেকে  এই ছন্দে কবিতা রচনা হয়েছে। বলতে গেলে এটিই কবিতার মৌলিক ছন্দ ।

পক্ষ ০২

এটা হলো স্বাধীন ছন্দ। এতে কবিতা লেখা হয় গদ্যের মতো, মানে বাক্য দীর্ঘ সংক্ষিপ্ত হতে পারে, কিন্তু এর ভেতরেও অন্তর্নিহিত সুর ও গতি থাকে। এখানে কোনো নিয়মিত মাত্রা বা তাল নেই, তবুও পড়লে ভেতর থেকে একটা সঙ্গতি, একটা সুর পাওয়া যায়। এটাই গদ্য ছন্দ। এই ছন্দ কবিতায় অন্তমিল না থাকলেও পাঠে ছন্দ অনুভব হয়, ভাব গভীর এবং সহজে পাঠককে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। তাই কালের ক্রমে এই ছন্দকে পাঠক মেনে নিয়েছে । এই দুটি ছন্দই প্রতিষ্ঠিত কবিদের হাতে প্রবর্তন হয়েছে। যারাই ছন্দবদ্ধ কবিতার সৃষ্টি করেছেন তারাই আবার গদ্য ছন্দ বা গদ্য কবিতার সূচনা করেছেন । উভয় ছন্দই অনেক গবেষণা, বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক ভিত্তিতে সৃষ্টি। তাই এখানে কোনো ছন্দকেই অস্বীকার করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। যদি কোনো প্রতিভাবান থেকে থাকেন তাহলে হয়তো আরও নতুন নতুন ধারা সাহিত্যে যুক্ত করবে। সাহিত্য এমনই- যুগ, কাল যেখানে নিয়ে যায়।

ছন্দের গুরুত্ব

কবিতায় ছন্দ সৌন্দর্যের পাশাপাশি গভীর নান্দনিক ও মনস্তাত্ত্বিক তাৎপর্য বজায় রাখে। একধরনের সুর, গতি ঠিক রাখে যা পাঠে তৃপ্তি দেয়। মেজাজ বা অনুভূতি প্রকাশে সক্ষম। ছন্দ কবিতাকে সহজে মুখস্থযোগ্য করে তোলে। মৌখিক সংস্কৃতির যুগে কবিতা টিকে ছিল ছন্দের কারণেই। ছন্দ কবিতায় একটি শৃঙ্খলাবোধ আনে এতে ভাষা সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল হয়। ছন্দই কবিতাকে গদ্য থেকে আলাদা করে তোলে। বাংলা কবিতায় ছন্দের ইতিহাসও আকর্ষণীয়। প্রাচীন কাব্যে (চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্য) ছন্দ ছিল সংগীতনির্ভর। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছন্দকে ভাবের প্রকাশরূপে ব্যবহার করেন। তার হাতে ছন্দ নতুন জীবন পায়। পরবর্তীতে জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ প্রমুখ কবি গদ্য ছন্দে গভীর অন্তর্লীন সুর সৃষ্টি করেছেন। আজকের কবিতায় ছন্দ পুরোপুরি মুক্ত, কিন্তু তার ভেতরে এখনো সঙ্গতির ঐতিহ্য টিকে আছে।

তাহলে উপরোক্ত দ্বন্দ্বের সমাধান কী?

বলতে গেলে দুই পক্ষরই মতামত যৌক্তিক । আর আমার মতে ‘ছন্দের রূপ নয়, ছন্দের অনুভবই মূখ্য।’ একটি চোখের দেখা একটি মনের দেখা। মোট কথা কবিতায় ছন্দ থাকবে, যে লেখায় ছন্দ নেই সে লেখা কবিতা হয়ে উঠবে না। ছান্দসিক কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ তার বিখ্যাত ‘ছন্দ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন– ‘চৈতন্যহীন শরীর বা শরীরবিহীন চৈতন্যের মতো ছন্দহীন কবিতা ও কবিতাহীন ছন্দ সোনার পাথরবাটি মাত্র। কবিতা থেকে ছন্দকে পৃথক করা যায় না, ছন্দ থেকে কবিতাকেও আলাদা করা অসম্ভব।’ অর্থাৎ উপরোক্ত ছন্দের দ্বন্দ্বের সমাধান হচ্ছে কবিতায় ছন্দ থাকবেই, সেটা হোক নির্দিষ্ট মাত্রামিলের অথবা গদ্য ছন্দ। অনেকে ছন্দ বলতে শুধু মাত্রামিলকে বুঝি, দ্বন্দ্ব মূলত এখানে। কিন্তু ছন্দ কি শুধুই মাত্রামিল? ছান্দসিক কবি বদরুল হক তার ‘ছন্দ শিখি ছন্দে লিখি’ গ্রন্থে যেমন বলেছেন অন্তমিল ছন্দ নয়, তেমনি শুধুমাত্র কবিতার নির্দিষ্ট কাঠামোগত গাণিতিক বিন্যাসও ছন্দ নয়। ছন্দ সেটাই যে মাত্রামিল, অন্তমিল, গাণিতিক বিন্যাস ব্যবহারের ফলে লেখা কাব্যিক হয়ে উঠে পঙক্তি ভাষার জড়ধর্ম থেকে মুক্তি পায় এবং শৈল্পিক অনুভব হয়। তাহলে কি গাণিতিক বিন্যাস ছাড়া, অন্তমিল ছাড়া ছন্দ হবে না? পঙক্তি শৈল্পিক হবে না, কিংবা লেখা কাব্যিক হয়ে উঠবে না? অবশ্যই উঠবে। আর এটাই হচ্ছে গদ্য ছন্দ, যা কবিতায় অন্তর্নিহিত থাকে। দেখা যায় না অনুভব করা যায়। আজকের এই ছন্দের দ্বন্দ্ব নিয়ে আশা করি স্পষ্ট হয়েছি, এবং কবিতায় ছন্দের গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছি। সার কথা হচ্ছে ছন্দ ছাড়া কবিতা হয় না, তাই আমাদের অবশ্যই ছন্দ সম্পর্কে জানতে হবে, শিখতে হবে। তাহলেই লিখতে পারব প্রকৃত কবিতা। আমরা এখন উভয়ই ছন্দ সম্পর্কে ধারাবাহিক জানব। আগামী আলোচনায় দ্বন্দ্বের প্রথম পক্ষের যে ছন্দ তা সম্পর্কে জানব এবং ছন্দ শিখব।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!