ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সঠিক ব্যবস্থাপনায়

দেশি মুরগি পালন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

দেশি মুরগি বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারে ছোট পুঁজির মাধ্যমে পোষ্য ও আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অধিকাংশ নারী এখনো সনাতন পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করেন। এই পদ্ধতিতে মুরগির উৎপাদনচক্রে সময় বেশি লাগে, ডিম কম পাড়ে, ডিমের মধ্যে বাচ্চা ফোটার হার কম এবং বাচ্চার মৃত্যুহার বেশি। ফলে অনেক সময় দেশি মুরগি পালন থেকে প্রত্যাশিত লাভ হয় না। একটি উৎপাদনচক্রে দেশি মুরগি ১৪০-১৬৫ দিন সময় নেয়। এই সময়ে একটি মা-মুরগি ১৫-১৮টি ডিম দেয় এবং বছরে ৪৫-৫০টি ডিম পাড়ে। তবে পুষ্টির ঘাটতি, পর্যাপ্ত খাবারের অভাব, রোগ এবং চিল, কাক, বেজি, বনবিড়াল ইত্যাদি প্রাকৃতিক শিকারির কারণে এই ডিমের মধ্যে শুধু ১০-১২টি বাচ্চা ডিম বা মাংসের জন্য ব্যবহারযোগ্য বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এই কারণে সনাতন পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন লাভজনক হয় না। এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে দেশি মুরগি পালন লাভজনক করতে বিশেষ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। চলুন জেনে নেই কীভাবে তা সম্ভব-

প্রথমেই মা-মুরগির জন্য একটি রাত্রিকালীন থাকার ঘর তৈরি করা প্রয়োজন। ডিম পাড়ার জন্য নেস্ট থাকলে মা-মুরগি আরামদায়ক পরিবেশে ডিমে তা দিতে পারে। নেস্টের সামনে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি রাখা হলে মা-মুরগি নিরবচ্ছিন্নভাবে ডিমে তা দিতে পারে, যা ডিম ফোটার হার বৃদ্ধি করে। ডিম ফোটার পর বাচ্চা মুরগি লালনপালনে ক্রিপারসহ খাঁচা ব্যবহার করা হয়। মুরগির খাঁচা সাধারণত তিনটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি প্রকোষ্ঠে একটি খাবার ও পানির পাত্র থাকে এবং একটি মা-মুরগি তার ১০-১২টি বাচ্চা নিয়ে থাকে। এতে বাচ্চারা প্রাকৃতিক শিকারি থেকে নিরাপদ থাকে এবং নিবিড় পরিচর্যায় বড় হয়। মুরগি পালনের ক্ষেত্রে রোগবালাই নিয়ন্ত্রণও গুরুত্বপূর্ণ।

সময়মতো টিকা দিলে রোগজনিত মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। সাধারণত মুরগিকে ২টি রাণী, ২টি গামবোরো ও ১টি ফাউল কলেরা টিকা দেওয়া হয়। এই নিয়ম অনুসরণ করলে ৯০-১০০% বাচ্চা ডিম বা মাংসের জন্য ব্যবহারযোগ্য বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এ ছাড়া মা-মুরগি বাচ্চার সঙ্গে ৬-৭ দিন থাকার পর আলাদা করে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় উইনিং। উইনিং-এর মাধ্যমে মা-মুরগি দ্রুত বাচ্চার মায়া ত্যাগ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় ডিম দিতে শুরু করে। সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি মা-মুরগি বছরে ৯০-১২০টি ডিম উৎপাদন করতে পারে।

এ ছাড়া, খাঁচা ব্যবস্থার মাধ্যমে বাচ্চাগুলো নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করা যায়। মা-মুরগি এবং বাচ্চা একসঙ্গে থাকায় তাদের খাবার, পানি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সহজে নিশ্চিত করা যায়। এতে বাচ্চার মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

দেশি মুরগি পালন লাভজনক করার ক্ষেত্রে এভাবে সঠিক আবাসন, পর্যাপ্ত খাবার, নিরাপদ পরিবেশ এবং নিয়মিত টিকা নিশ্চিত করতে পারলে ছোট পুঁজি দিয়ে শুরু করা হলেও দেশের গ্রামীণ পরিবারগুলো উল্লেখযোগ্য আয় করতে পারবে। দেশে দেশি মুরগির ধারাবাহিক উৎপাদন কেবল পারিবারিক আয়ের জন্য নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। এটি গ্রামীণ নারীদের জন্য একটি লাভজনক ও স্থায়ী কৃষি উদ্যোগ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করবে।