ঢাকা বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জৈব সারের সহজ প্রয়োগ

সবুজ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

বাংলাদেশের কৃষি এখন এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। একসময় কৃষকেরা পুরোপুরি রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এতে প্রথমদিকে ফলন বেড়েছিল, তবে দীর্ঘমেয়াদে মাটির উর্বরতা কমেছে, জমির স্বাভাবিক জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়েছে এবং উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এসব সমস্যার সমাধান হিসেবে কৃষি বিশেষজ্ঞরা আবার জৈব সারের দিকে ঝুঁকতে বলছেন। জৈব সার শুধু মাটির পুষ্টি সরবরাহই করে না, বরং মাটির গঠন, পানি ধারণক্ষমতা এবং ক্ষুদ্র জীবাণুর কার্যকলাপ বাড়িয়ে জমিকে দীর্ঘমেয়াদে উর্বর রাখে। তাই টেকসই কৃষির জন্য জৈব সার ব্যবহার এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। চলুন যেনে নেওয়া যাক টেকসই কৃষিতে জৈব সারের প্রয়োগ সম্পর্কে-

সহজলভ্য উৎস: গ্রামের প্রতিটি বাড়ি বা খামারেই জৈব সার তৈরির উপকরণ মজুত থাকে। গরু, ছাগল বা হাঁস-মুরগির গোবর, খড়কুটো, পাতা, রান্নাঘরের বর্জ্য, এমনকি পানির শেওলা, সবকিছু দিয়েই মানসম্মত জৈব সার তৈরি করা যায়। যেমন- গরুর গোবর সবচেয়ে প্রচলিত উপকরণ, যা দীর্ঘদিন ধরে কৃষকেরা ব্যবহার করে আসছেন। আবার ফসলের খড় ও শুকনো পাতা মাটির নিচে পচিয়ে সহজেই কম্পোস্ট সার বানানো যায়। শহরেও ছাদবাগানের জন্য রান্নাঘরের সবজির খোসা বা ফলের অবশিষ্টাংশ কাজে লাগানো সম্ভব। অর্থাৎ জৈব সার তৈরির জন্য আলাদা খরচ করতে হয় না, বরং বাড়ির অব্যবহৃত জিনিসই কাজে লাগানো যায়।

প্রয়োগের সহজ কৌশল: জৈব সার প্রয়োগ করা একেবারেই সহজ এবং ঝুঁকিমুক্ত। জমিতে ফসল রোপণের আগে প্রতি একরে ৮-১০ টন গোবর সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নিলে ফসলের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি মজুত হয়। সবজি বা ফলের গাছে প্রতি গর্তে ২-৩ কেজি জৈব সার দিয়ে রোপণ করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। নিয়মিত ফসলের যতেœ প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর অল্প অল্প করে সার দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া তরল জৈব সার বা ‘জৈব চা’ এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি তৈরি হয় পচা গোবর বা গাছের পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে। পরে সেই পানি ছেঁকে গাছে দেওয়া হলে দ্রুত শোষিত হয় এবং ফলন বাড়ে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, জৈব সার ব্যবহার করলে অতিরিক্ত প্রয়োগের ক্ষতি হয় না, যা রাসায়নিক সারের ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি।

লাভজনক সমাধান: জৈব সার ব্যবহার করলে কৃষকের খরচ অনেক কমে যায়। রাসায়নিক সার কিনতে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হয়, কিন্তু জৈব সার মূলত স্থানীয় উপকরণ থেকে তৈরি হওয়ায় খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। আবার রাসায়নিক সারের কারণে মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়ে ভবিষ্যতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অন্যদিকে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা দীর্ঘদিন অক্ষুণœ থাকে, ফলে একই জমিতে বারবার ভালো ফসল পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাজারে এখন জৈব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। মানুষ স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে রাসায়নিকমুক্ত শাক-সবজি খেতে চাইছে। তাই জৈব সার দিয়ে উৎপাদিত সবজি ও ফল বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব, যা কৃষকের জন্য বাড়তি আয় নিশ্চিত করে।

টেকসই কৃষির পথ: কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনের কৃষি হবে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। জলবায়ু পরিবর্তন, জমির সীমাবদ্ধতা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে জমির উর্বরতা রক্ষা করা জরুরি। এজন্য জৈব সার একটি অপরিহার্য সমাধান। এটি মাটিতে কার্বন যোগ করে, ক্ষুদ্র প্রাণীর সংখ্যা বাড়ায় এবং জমিকে প্রাকৃতিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে। কৃষকরা যদি নিয়মিত জৈব সার ব্যবহার করেন, তবে জমি শুধু উর্বর থাকবে না, বরং রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীলতাও কমবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে জৈব সার উৎপাদনকে যদি বাণিজ্যিকভাবে গ্রহণ করা যায়, তবে কৃষকের জীবনমান উন্নত হবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।