ভবিষ্যৎ সরকারকে ‘জুলাই সনদ’ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই সনদ উপেক্ষা করা হলে আবারও ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে তারা। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, দেশে আরেকটি স্বাধীনতার দরকার। মানুষ মানুষের গোলামি করলে সে কখনো স্বাধীন হতে পারে না। সে গোলামের গোলাম হয়ে বাঁচতে পারে, স্বাধীন হয়ে বাঁচতে পারে না। সে জন্য আগামী দিনের বাংলাদেশ এবং দেশের জনসাধারণকে সত্যিকার স্বাধীন করতে হলে মানব রচিত মতবাদকে দাফন করে জাতীয় সংসদে কোরআনের আইনকে বিজয়ী করতে হবে। এতে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তি আসবে, কল্যাণ আসবে। দুনিয়াতে আমরা সম্মানিত হব, আখেরাতেও জান্নাত পাব ইনশাআল্লাহ।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জুলাই ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা এবং ‘২য় স্বাধীনতার শহিদ ও আহত যারা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি ভার্সনের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের সেক্রেকটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, এ দেশকে যদি সত্যিকার কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে হয়, মানবিক বাংলাদেশ যদি গড়তে হয়, মানুষের জন্য আল্লাহর দেওয়া আল কোরআনের বিধান চালু করতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনÑ সব জীবনে আমাদের কোরআন-সুন্নাহর আইন মেনে চলার অভ্যাস করতে হবে। তিনি বলেন, জীবন বেশিক্ষণের জন্য নয়। যেকোনো সময় আল্লাহর কাছে চলে যেতে হতে পারে। এ জন্য আল্লাহর বিধানকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার জন্য আসুন আমরা মজবুতভাবে এগিয়ে যাই। প্রয়োজনে জুলাই শহিদদের মতো আমাদেরকেও জীবন দিতে হবে। যদি আমরা দ্বীনের জন্য জীবন কোরবান করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ হবে সত্যিকারভাবে আল্লাহর বিধান কায়েমের একটি দেশ। রাসুল (সা.) মদিনায় যে রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন, সেই আদলে বাংলাদেশ গঠিত হবে। তিনি শহিদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, শহিদদের জন্য আপনারা গৌরবান্বিত। সেই আদর্শকে লালন করে, ধারণ করে আমদের এগিয়ে যেতে হবে। তারা আমাদের সামনের মডেল। আর জামায়াতে ইসলামী শহিদদের নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে যে স্মারক প্রকাশ করেছে, তা আমাদের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমরা এটা পড়ব এবং অনুপ্রাণিত হব ইনশাআল্লাহ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি বলেছেন, মৃত্যু হলে বিদেশেও হতে পারে, বাংলাদেশেও হতে পারে। বাংলাদেশেই মৃত্যু হোকÑ এটা চাই। তিনি বলেন, আমি বিদেশে গেলে দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থাহীনতা প্রকাশ পাবে। বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য এ রকম মজবুত ঈমান প্রয়োজন। জামায়াত আমিরের দ্রুত সুস্থতার জন্য সবার দোয়া কামনা করেন তিনি। সেমিনারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সব হত্যাকা-ের বিচার করতে হবে। জামায়াত নেতাদের হত্যার ঘটনায় শুধু শেখ হাসিনার বিচার করলে হবে না, এর সঙ্গে জড়িত বিচারক, প্রসিকিউটরসহ সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। জুলাই শহিদদের প্রতি মর্যাদা রক্ষার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের ভেতরে যেসব ফ্যাসিবাদের ভূত আছে, তাদের তাড়াতে হবে। নির্বাচনের জন্য অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। উপদেষ্টারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে পতিত স্বৈরাচারের মতো পরিণতি হবে।