বাংলাদেশিদের জন্য অনেক দেশে ভিসা পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে পর্যটন ভিসার ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন জটিলতা। কোনো কোনো দেশ পুরোপুরি ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করেছে, আবার কোথাও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মনে করছেন, মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দেওয়ায় এ সংকটের অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, বাংলাদেশকে ঘিরে গড়ে উঠছে এক ধরনের আস্থার সংকট।
আগে যেসব দেশে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, সেসব দেশের অনেকে এখন ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে বা ভিসা প্রক্রিয়ায় কঠোরতা আরোপ করেছে।
ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, মিশর ও তুরস্ক আপাতত পর্যটন ভিসা দিচ্ছে না। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশে ভিসা পাওয়া গেলেও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। থাইল্যান্ডে ভিসা পেতে লেগে যাচ্ছে এক মাসেরও বেশি সময়। সিঙ্গাপুরেও প্রত্যাখ্যানের হার বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে ইউরোপমুখী শিক্ষার্থী আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রিজেকশনও। এই পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দোষ দিয়েছেন দেশীয় আবেদনকারীদের।
তিনি বলেন, ‘ভুয়া ডকুমেন্টস এখনো অনেকেই ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তি ও নজরদারিতে এসব সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে। আমাদের ঘর গোছাতে হবে—যাতে দেশ থেকেই এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্ম না হয়। তবেই আমরা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব।’
বিশ্লেষকদের মতে, শুধু ভুয়া কাগজপত্রই নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটও বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা কমছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘যখন একটি দেশের সার্বিক চিত্র বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, তখন ব্যক্তি পর্যায়ের আবেদনকারীরাও এর শিকার হন। অনেকে এখন আর বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে আগ্রহী নন। এটি মূলত আস্থার সংকটেরই প্রতিফলন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সমস্যা চিহ্নিত করলেই চলবে না, বরং এসব মোকাবিলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে হতে হবে আরও সক্রিয় ও কৌশলী। স্বচ্ছতা, নির্ভরযোগ্যতা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও অভিবাসনে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সংকট আরও গভীর হবে।