ধূমপান না করেও অনেক মানুষ ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সংখ্যাটা চোখে পড়ার মতো বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো পরোক্ষ ধূমপান বা প্যাসিভ স্মোকিং। অর্থাৎ, ধূমপায়ী ব্যক্তির আশপাশে থাকা ব্যক্তিরাও বিপদে পড়ছেন, যদিও তারা নিজে কখনো ধূমপান করেননি।
পরিসংখ্যান যা ভয় পাইয়ে দেয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ফুসফুস ক্যানসার হলো বিশ্বব্যাপী ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি বছর এই একটি রোগই মোট ক্যানসার মৃত্যুর প্রায় শতাংশের জন্য দায়ী। নতুন ক্যানসার রোগীর সংখ্যায় এটি ১১ শতাংশ অবদান রাখে। ধূমপানই ফুসফুস ক্যানসারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ, যা প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
ধূমপান ছাড়াও যেভাবে ঝুঁকি বাড়ে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপায়ী কারও সঙ্গী বা কাছাকাছি অবস্থান করা ব্যক্তির ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২০–৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বিশেষ করে, যদি একজন নারী দীর্ঘদিন একজন ধূমপায়ী পুরুষের সঙ্গী হন, তাহলে তার ঝুঁকি প্রায় ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অধূমপায়ীদের ফুসফুস ক্যানসার ভিন্ন ধরনের
ধূমপায়ীদের তুলনায় অধূমপায়ীদের মধ্যে যে ফুসফুস ক্যানসার দেখা যায়, তা জিনগতভাবে ভিন্ন প্রকৃতির।
এটি সাধারণত ‘ড্রাইভার মিউটেশন’ নামে একটি নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে।
এই ধরনের ক্যানসারকে বলা হয় অঙ্কো-জিন অ্যাডিকটেড লাং ক্যানসার, যার চিকিৎসায় লক্ষ্যভিত্তিক ওষুধ (targeted therapy) ভালোভাবে কাজ করে।
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়, যা প্রাথমিক ও অ্যাডভান্সড উভয় ধাপে কার্যকর।
ধূমপান বন্ধ করলেই কি ঝুঁকি কমে?
হ্যাঁ। গবেষণা বলছে, ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি ১০ থেকে ৩০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। তবে ধূমপান বন্ধ করার ৫ বছরের মধ্যেই ঝুঁকি ২০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
করণীয় কী?
ধূমপান ত্যাগ করুন, নিজের ও আশপাশের মানুষদের জীবন বাঁচাতে।
পরোক্ষ ধূমপানের পরিবেশ এড়িয়ে চলুন বিশেষ করে ঘর, অফিস বা গণপরিবহনে।
বাতাস বিশুদ্ধ রাখুন ইনডোর এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিশেষত যদি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থাকেন।
অধূমপায়ী হলেও আপনি ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন এটা আজ আর শুধু অনুমান নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য। তাই শুধু নিজের অভ্যাস নয়, আশপাশের পরিবেশকেও বদলাতে হবে। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।