স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ছাত্র-জনতার সফল অভুত্থ্যানের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী ৫ আগস্ট।
বছরপূর্তি উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে নানান কর্মসূচি ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশেষ এই দিনকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয় শহর বরিশালেও আয়োজনের কমতি নেই। তবে আশঙ্কা রয়েছে, শহরজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে একটি ভীতিকর পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহে চোকপোস্ট বৃদ্ধির পাশাপাশি নিষিদ্ধঘোষিত নেতাকর্মীদের ধরতে রাতের বেলা বাড়িতে বাড়িতে চলছে পুলিশি অভিযান। ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছাত্র, যুব ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনা করে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়। এরপর থেকেই বরিশাল পুলিশের, বিশেষ করে মেট্রোপলিটন আওয়াতাধীন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে দেখা যায়।
বিএমপি সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় পুলিশের নির্দেশনা আসার পর বরিশাল মহানগরীতে বিশেষ করে মহল্লাভিত্তিক নজরদারি বাড়ানো হয় এবং বৃহস্পতিবার থেকেই শহরের অন্তত ১৩ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদসহ তল্লাশিও করা হচ্ছে। পাশাপাশি আবাসিক হোটেল ও ছাত্রাবাসগুলোকেও নজরদারিতে রাখাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীক্ষè দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।
তবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপালী বাংলাদেশকে জানান, গণঅভুত্থ্যানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নিষিদ্ধঘোষিত কোনো গোষ্ঠী যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না, পারে সে বিষয়ে মাঠ পুলিশ সর্বদা সজাগ রয়েছে।
অভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গোটা শহরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মী অপকর্মে জড়িত রয়েছেন, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের ধরতে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের ওসি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বরিশালে নাশকতার কোনো আলামত না থাকলেও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির সব পথ রুদ্ধ করা হয়েছে।
শহরের অভ্যন্তরে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ এলাকাভিত্তিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ফলে নিষিদ্ধ কোনো গোষ্ঠী মাঠে নেমে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এবং অশান্ত পরিবেশ-পরিস্থিতির সম্ভবনা নেই বললেই চলে মন্তব্য করেন পুলিশ কর্মকর্তা।
জানা গেছে, গত দুই দিনে মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং সেনাবাহিনীও বরিশাল নগরীতে টহল বাড়িয়েছে, যা নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি শহরবাসীকে একধরনের স্বস্তির আবহ দিয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে বরিশাল শহরবাসীকে নিরাপদ ও শান্তিতে রাখতে পুলিশ প্রশাসনের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত কোনো গোষ্ঠী যাতে শহরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, তার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সাইবার জগতেও সতর্ক দৃষ্টি আছে, কেউ যাতে উসকানিমূলক পোস্ট বা গুজব রটিয়ে ভয়ানক পরিবেশ তৈরি করতে না পারে। এ ছাড়া নিষিদ্ধঘোষিত রাজনৈতিক দলের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদেরও ধরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বরিশাল পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
আপনার মতামত লিখুন :