গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশের মতো বিভিন্ন বিভাগীয় শহরেও উদযাপিত হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিজয় শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়। ব্যুরোপ্রধানদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে শহরভিত্তিক কর্মসূচিগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ
রংপুরে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা ও পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠান
রংপুর নগরীর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠের বিপরীতে নবনির্মিত জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে গতকাল সকাল ৯টা ১ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।
শ্রদ্ধা নিবেদনের শুরুতে উপস্থিত ছিলেন শহিদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন, শহিদ পরিবার ও আহতরা। এরপর শ্রদ্ধা জানান বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শহিদ পরিবার ও আহতদের সংবর্ধনা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন রংপুরের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী ছাত্রশিবির, উলামা জনতা ঐক্য পরিষদ, আইনজীবী সমিতি, বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন সংগঠন র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও দিবসটি উদযাপিত হয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে।
খুলনায় শ্রদ্ধা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন
খুলনার শিববাড়ি মোড়ে জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। জুলাই শহিদ পরিবার, আহত যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, কেসিসি প্রশাসক, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
দিনভর চলা কর্মসূচির মধ্যে ছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিল। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি পুনর্জাগরণ।’
চট্টগ্রামে সংবর্ধনা ও আলোচনা
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ১০টায় সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হয় শহিদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার ভিডিওবার্তা প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আহত যোদ্ধা, শহিদদের স্বজন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগ জাতির অহংকার।’
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং শহিদ পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
বরিশালে গ্রাফিতি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সমাবেশ
বরিশালে আমতলা মোড় এলাকায় গ্রাফিতি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জুলাই দিবসের কর্মসূচি। এরপর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জুলাই অভ্যুত্থানভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আলোচকরা বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণবিস্ফোরণে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে। আজকের বাংলাদেশ সেই চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাবে।’
ময়মনসিংহে স্মৃতিচারণ, শোভাযাত্রা
ময়মনসিংহে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকালে দীঘারকান্দা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শ্রদ্ধা জানান সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। টাউন হল তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা স্মৃতিচারণ করেন।
এদিন বিজয় শোভাযাত্রা বের করে মহানগর বিএনপি, ইসলামী ছাত্রশিবির ও খেলাফত মজলিস। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকেও পৃথক শোভাযাত্রা ও সমাবেশ হয়।
বক্তারা বলেন, ‘জুলাই চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বৈষম্যহীন, উদার এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার জন্য সবাই এগিয়ে আসতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :