- হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া আরমান গ্রেপ্তার। মোট গ্রেপ্তার ৮
গাজীপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে রফিকুল ইসলাম আরমান (২০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। এদিকে এখনো তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মোবাইল ফোন উদ্ধার না হওয়ায় রহস্যের জট খুলছে না বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রবিউল হাসান বলেন, তুহিন হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়াদের একজন আরমান। সিসিটিভি ফুটেজে নীল রঙের শার্ট পরিহিত যাকে দেখা গেছে, তিনি হলেন এই আরমান। সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাংবাদিক তুহিন হত্যার এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়া মূল হোতাসহ ছয়জনকে গাজীপুর মহানগর পুলিশ, গাজীপুর মহানগর জেলার বিভিন্ন এলাকা ও রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় সর্বশেষ তুহিনসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ নিয়ে তুহিন হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরিচয় শনাক্ত করার পর গত শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী এলাকা থেকে স্বাধীন নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে। র্যাব পরে আরেক আসামি শহিদুলকে কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা গেছে, ঘটনার দিন চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরত আসা বাদশা নামে এক ব্যক্তির ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ভিডিও ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। সন্ত্রাসীরা ভিডিও ডিলিট করার জন্য চাপ দেয়, কিন্তু তুহিন এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, প্রথমে শাপলা ম্যানশনের কাছে বাদশার ওপর হামলা হয়। ২০-৩০ মিনিট পর মসজিদ মার্কেটের সামনে তুহিনের ওপর হামলা চালানো হয়। এই সময় সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে শোডাউন করছিল।
তুহিন দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ফোনগুলোর একটিতে হামলার ভিডিও এবং অপরাধীদের তথ্য রয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনো মোবাইল ফোন দুটি উদ্ধার করতে পারেনি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক তুহিনের মোবাইল ফোনটি একটি হত্যা রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপর্ণ আলামত। তাই মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ফোনটি পাওয়া গেলে তিনি কী ভিডিও করেছিলেন, কারা হত্যায় জড়িত চিহ্নিত করতে সহজ হবে। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের লোকেশন শনাক্ত করা যাচ্ছে না, তবে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজাখুঁজি চলছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি মার্কেটের ভেতরে প্রকাশ্যে সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ সময় তার মোবাইল ফোনটিও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। নিহত সাংবাদিক তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। হত্যাকা-ের পর তার ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে মহানগরীর বাসন থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামিদের পরিচয় শনাক্ত করে। জিএমপি ও র্যাব এ ঘটনায় গোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।