ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

হাঁটু ব্যথার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

শারমিন হোসেন
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৫:২০ এএম

মানব দেহের ওজন বহন করার জন্য যে ক’টি জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাঁটু। আমরা সাধারণত মনে করি যে, বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হাঁটু ব্যথা হয়। বিষয়টি আসলে তা নয়, যেকোনো বয়সের মানুষেরই হাঁটু ব্যথা হতে পারে।

হাঁটু ব্যথায় অনেকেই ভোগেন। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হাঁটু ব্যথার হার বেশি। ভিটামিন ডি-এর অভাব এবং কিছু রোগের কারণে ও হাঁটু ব্যথা হতে পারে।

হাঁটু ব্যথা কেন হয়?

আমাদের পুরো শরীরের ওজন বহন করে হাঁটু। তাই হাঁটুতে যদি ব্যথা হয় সেটি যে কারণেই হোক না কেন তা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।

নানাবিধ কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে। যেমন-

১. বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাঁটু ব্যথার অন্যতম কারণ হচ্ছে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়স জনিত বাত। বয়স বাড়ার সঙ্গে হাঁটুর জয়েন্ট ক্ষয় হতে থাকে এবং ব্যথা হয়। এটি ডিজেনারেটিভ আর্থ্রাইটিস নামেও পরিচিত।

২. অস্থিসন্ধির মাঝে দূরত্ব কমে গেলে এবং অতিরিক্ত শারীরিক ওজনের কারণেও হাঁটু ব্যথা হতে পারে।

৩. হাঁটু ব্যথার অন্যতম

কারণ হচ্ছে আঘাতজনিত কারণ।

অনেক সময় অ্যাথলেট বা খেলোয়াড়দের লিগামেন্ট ইনজুরি হয়। আঘাতের কারণে হাঁটুর হাড়ের ফ্র্যাকচারের জন্য ব্যথা হতে পারে।

৪. সংক্রমণজনিত কারণে হাঁটুর ব্যথা হলে সেটিকে সেপটিস আর্থ্রাইটিস বলে। অনেক সময় ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকেও হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।

৫. বারসাইটিস এর কারণেও হাঁটুতে ব্যথা হয় এবং হাঁটু ফুলে যায়।

৬. মেনিসস্কাস ইনজুরি : কখনো কখনো হাঁটুর আঘাতের ফলে তরুণাস্থি ছিঁড়ে যায় এবং হাঁটুর জয়েন্টগুলো আটকে যায় যার ফলে হাঁটু ফুলে যায় এবং হাঁটুতে অতিরিক্ত ব্যথা হয়।

হাঁটু ব্যথার লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কি?

১. অসহ্য ব্যথার সঙ্গে জ্বর

২. হাঁটু চলাচলে অসুবিধা এবং পপিং শব্দ হওয়া

৩. হাঁটুর তাপমাত্রার পরিবর্তন হওয়া

৪.  হাঁটু ফুলে যাওয়া ও লাল ভাব হওয়া

৫. হাঁটুর সন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া

৬. অস্থিরতা ও হাঁটু সোজা করতে না পারা

৭. হাঁটুর শক্তি কমে যাওয়া

কখন একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

নি¤œলিখিত উপসর্গগুলো লক্ষ্য করলে আপনার অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত-

১. হাঁটুতে তীব্র ব্যথা হলে

২. আপনি যদি অনুভব করেন যে আপনার হাঁটু আপনার শরীরের ওজন সহ্য করতে অক্ষম এবং অস্থির

৩. অতিরিক্ত আকারে হাঁটু ফুলে গেলে

৪. টয়লেট ব্যবহার করা এবং চলাফেরায় সমস্যা দেখা দিলে

৫. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে হাঁটুতে ব্যথা, হাঁটু ফুলে যাওয়া ও লাল ভাব রয়েছে

৬. হাঁটুতে আঘাত লাগলে প্রচ- ব্যথা হলে

৭. হাঁটু সম্পূর্ণভাবে বাঁকা বা সোজা করতে না পারলে

চিকিৎসা পদ্ধতি

হাঁটু ব্যথায় বরফ কিংবা গরম পানির সেঁক দেওয়া হয়। কিন্তু কখন আপনি কোন প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করবেন সেটার জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে হাঁটুর ব্যথার জন্য সাধারণত বরফ কিংবা ঠান্ডা সেঁক অনেকটাই আরাম দিতে পারে। তবে দীর্ঘদিন যাবত ব্যথা হলে অথবা অস্ট্রিও আর্থ্রাইটিস জনিত ব্যথায় গরম সেঁক সবচেয়ে বেশি কার্যকর। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে এসব রোগীরা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে পারেন এবং পাশাপাশি একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করলে হাঁটু ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে পারেন।

নিচে কিছু ব্যায়াম বর্ণনা করা হলো-

১ একক হ্যামস্টিং স্টেচ

একক হ্যামস্টিং স্টেচ উরুর পেছনে লক্ষ্য করে, যা হাঁটুর চারপাশের উত্তেজনা উপশম করতে সাহায্য করে। এই প্রসারিত করার জন্য একটি পা প্রসারিত এবং অন্য পা বাঁক দিয়ে মেঝেতে বসুন। প্রসারিত পায়ে আপনার পায়ের আঙ্গুলের দিকে পৌঁছান এবং ১৫-৩০ সেকেন্ডের জন্য প্রসারিত

ধরে রাখুন। পা পরিবর্তন করুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন।

২ স্ট্রেইট লেগ লিফট ব্যায়াম

সোজা পা উত্তোলনের ব্যায়াম হাঁটুর ওপর ওজন না রেখে হাঁটু জয়েন্টের চারপাশের পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এই ব্যায়ামটি করার জন্য একটি পা বাঁকানো এবং অন্যটি সোজা রেখে আপনার পিঠের উপর শুয়ে পড়ুন। সোজা পা-টি বাঁকানো হাঁটুর ওপর উচ্চতা পর্যন্ত তুলুন কিছুক্ষণ ধরে রাখুন এবং এটিকে নিচে নামিয়ে দিন। প্রতিটি পায়ে ১০-১৫টি পুনরাবৃত্তির জন্য লক্ষ্য রাখুন।

৩. হাঁটু প্রসারিত 

জয়েন্টের নমনীয়তা বজায় রাখার জন্য হাঁটু প্রসারিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটু প্রসারিত করতে একটি চেয়ারের প্রান্তে বসুন এবং আরেকটি পা সোজা করে প্রসারিত করুন। সামনের দিকে ঝুকুন আলত করে এবং পা সুইচ করার আগে ১৫-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

৪. লায়িং হ্যামস্টিং স্টেচ

এই ব্যায়াম অনুশীলনে প্রথমে মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে বা পা উপরে তুলুন। তারপর প্রথম ব্যায়ামের মতো ৪৫ ডিগ্রি পজিশন নিন। এক্ষেত্রে মাটির সঙ্গে পা ৯০ ডিগ্রি কোণে থাকবে। দুই হাত পা উরুর নিচে রেখে ভারসাম্য বজায় রাখুন। এবার বা হাঁটু আস্তে আস্তে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন । ৩০ সেকেন্ড অনুশীলন করে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। দুই পায়ে অনুশীলনের জন্য ৩০-৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন।

৫. হাফ স্কোয়াট

এই ব্যায়াম অনুশীলন করতে আপনাকে মেঝেতে শুয়ে নয় বরং মেঝের ওপর দাঁড়িয়ে করতে হবে। প্রথমে হাত দুটি সামনের দিকে তুলুন। এবার বসার চেষ্টা করুন। তবে পুরোপুরি নয়। অর্ধেক বসার ভঙ্গি পর্যন্ত রেখেই উঠে পড়ুন। এভাবে অন্তত দশ বার অনুশীলন করতে পারেন।

শারমিন হোসেন
ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট

চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা।