বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নগদবিহীন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা মানুষের জন্য আয় সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, নগদবিহীন অর্থনীতি (ক্যাশলেস ইকোনমি) যেন আয়বিহীন অর্থনীতিতে (ইনকামলেস ইকোনমি) পরিণত না হয়।’
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল বুধবার ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট ২০২৫’-এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এমন মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) আব্দুর রহমান খানসহ অনেকে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের রেভিনিউ খাতে বড় পরিবর্তন আসছে। এরই মধ্যে দুই নীতির পার্থক্য করা হয়েছে। তবে আমাদের একটি সমন্বিত পকিল্পনা দরকার। চারটি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবেÑ ব্যক্তি খাতের পক্ষ থেকে কাঠামো তৈরি, দ্রুত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ, ক্যাশলেস যেন রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে থাকে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি পলিসি নির্ধারণ করা। যারা ইনকামের বাইরে আছে, তাদের এখানে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইসিএমএবি) ও মাস্টারকার্ড আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে কেবল প্রযুক্তিগত নয়, একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য একটি সমন্বিত কৌশল নেওয়া প্রয়োজন।’
‘দেশে এখনো প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ নগদ অর্থ লেনদেনের ওপর নির্ভরশীল’ বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ডিজিটাল লেনদেন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি না ঘটলে ক্যাশলেস ইকোনমির সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না।
নগদবিহীন অর্থনীতি এগিয়ে নিতে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘সরকারি কেনাকাটা আইন সংশোধন, রাজস্বনীতিতে পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন ও ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রচেষ্টার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে ৭৫ শতাংশ লেনদেন ডিজিটালি করার লক্ষ্য নিয়েছে। তবে এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সরকারের নীতি সহজ করা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো, অবকাঠামো দুর্বলতাসহ যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘সার্বিক লেনদেনব্যবস্থা (পেমেন্ট ইকোসিস্টেম) বহুমুখী করতে হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে (এমএফএস) নগদ জমা ও উত্তোলনের বাইরে বিস্তৃত করতে হবে, যেন এগুলো রাস্তাঘাটের দোকানসহ বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক খাতেও ব্যবহৃত হয়। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ফিনটেক, টেলিকম ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক নগদবিহীন অর্থনীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।’
এ ক্ষেত্রে তিনটি সুপারিশ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘নগদবিহীন অর্থনীতি নিয়ে দেওয়া পরামর্শগুলোকে সমন্বিত করে একটি কাঠামোবদ্ধ প্রস্তাবনা তৈরি করা; পরিকল্পনা কমিশনকে এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে অগ্রগতি তদারক ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা।’
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্যাশলেস করতে পারলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে রাজস্ব খাত। তবে রাজস্ব বিভাগ সব ধরনের সুযোগ দেবে। ৫০ শতাংশের বেশি ডিজিটাল লেনদেন করলে তাকে করছাড়ের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার কথা আমরা আগেই বলেছি।’