‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় আছি’ বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সভা হবে। সেখানে কার কী দায়িত্ব, সেই সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় নির্বাচনে র্যাবের প্রস্তুতি জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি শহিদুর রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় আছি। নির্দেশনার আলোকে দায়িত্ব পালন করবে র্যাব। এর পাশাপাশি র্যাবের যারা আছেন, তাদের নির্বাচনি আইনকানুন বিষয়ে কিছু অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে নির্বাচনের প্রস্তুতি হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা। আশা করি একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পরিবেশ প্রয়োজন, তা তৈরিতে সক্ষম হব।’
এ সময় উপস্থিতি ছিলেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল ইফতেখার আহমেদ, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী এবং র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে হামলায় গ্রেপ্তার ৩
অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাতদের হামলার ঘটনায় ডাকাত দলের প্রধান ‘পিয়াস নয়ন গ্রুপ’-এর অন্যতম সদস্য নয়নের ছোট ভাই রিপনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ঢাকা ও গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনার পরই র্যাবের নেতৃত্বে থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি গাজীপুরেও অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। গাজীপুর মেট্রো এলাকায় টহল জোরদার করেছে র্যাব। অল্প সময়ে গাজীপুরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, দেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতোই র্যাবও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে গত ২৫ আগস্ট মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাত দলের হামলার ঘটনায় র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এর সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, “নির্বাচনের আগে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্রসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালায় র্যাব ২ ও ১০। গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুকুর হোসেন ওরফে শ্যুটার শুক্কুরকে দুটি অস্ত্র ও ১২ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০। অস্ত্রের গায়ের নম্বর মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে অপরাধীরা। ওই অস্ত্র দুটির একটি পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা করছি। তবে গুলির পেছনে ‘বিপি’ অর্থাৎ, ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ লেখা আছে। ফরেন্সিকে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এর আগে ১৭ আগস্ট সাইদুল ইসলাম ওরফে স্বপনসহ পাঁচজনকে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এলাকা থেকে মোহাম্মদপুর থানার লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব-২।”
র্যাব জানিয়েছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে উদ্ধারকৃত লুণ্ঠিত অস্ত্রের সংখ্যা ৩২৩ (পুলিশ ২৩১টি, র্যাব ৯৩টি), ১৯ হাজার ৩০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং ১৫০টি ম্যাগাজিন। পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ডিজি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের তথ্য পুলিশ সদর দপ্তর সংরক্ষণ করে। প্রতিদিন পুলিশ সদর দপ্তরের কন্ট্রোলরুমে যৌথ বাহিনীসহ সব বাহিনীর উদ্ধারকৃত অস্ত্রের তথ্য জমা হয়। তারা এ তথ্য সংরক্ষণ করে। এ ছাড়া যারা অস্ত্র নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আগেও বেশ কিছু মামলা রয়েছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা প্রকৃত সন্ত্রাসী।
মাদক দমনে সক্রিয় র্যাব
‘মাদকের অপব্যবহার বস্তি এলাকায় বেশি। এ নিয়ে কাজ করছি। এটা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটি অন্যতম চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। যখন ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোরদের দেশীয় অস্ত্রসহ ছিনতাইয়ের সময় গ্রেপ্তার করি, আমরাও কষ্ট পাই। তাদের তো স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কথা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক, এসব তরুণ কিশোরকে গ্রেপ্তার করতে হয় এবং মামলার আসামি হিসেবে কোর্টে চালান দিতে হয়। এদের সংখ্যা কিন্তু একেবারে কম না। তাদের মামলা দিয়ে জেলে পাঠাই, আবার জামিনে এসে ওই পেশায় যুক্ত হয়।’
র্যাবের ডিজি বলেন, মাদক দমনে র্যাব চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং সিআইডিও তদন্ত করছে। মাদকের পেছনে যারা বড় বড় অর্থ বিনিয়োগকারী আছে, তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনের মামলার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করার এখতিয়ার সিআইডির আছে। সম্প্রতি সিআইডি কক্সবাজার এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা করেছে এবং তদন্তাধীন আছে। এটি যদি আরও জোরদার করা যায়, হয়তো এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট দুই মাসে ৭৪টি অবৈধ অস্ত্রসহ ৩৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে ৪৪৬ জন, নারী নির্যাতনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এবং মাদক মামলায় ৭৪০ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত এক মাসে প্রায় ১৫ লাখ ৩৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব। এ ছাড়া মাদক মামলার অভিযুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। গত দুই দিনে যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত মাদক মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ডিজি বলেন, কেবল গ্রেপ্তার, মামলা, কোর্টে পাঠানো, আবার বেল নিয়ে ফিরে আসাÑ এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে অপরাধ দমন করা একটু কঠিন। এদিকে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতেও একটু সময় লাগে। মাদকের মামলার তদন্ত দুই-তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হয়। এরপর অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধের প্রবণতা আরেকটু কমত। কিন্তু এই শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়াটি কিছুটা দীর্ঘসূত্রতার কারণে হচ্ছে না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন