বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০৫:৪৯ এএম

খুলনার নদ-নদীতে এক বছরে  অর্ধশতাধিক লাশ উদ্ধার

হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০৫:৪৯ এএম

খুলনার নদ-নদীতে এক বছরে  অর্ধশতাধিক লাশ উদ্ধার

খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীতে লাশ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। গত এক বছরে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে অন্তত ৫০টি লাশ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। ঘন ঘন লাশ উদ্ধারের এ প্রবণতায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে নাগরিক সমাজ। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় বাসিন্দারা এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।

নৌ-পুলিশের তথ্য মতে, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৫০টিরও বেশি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টির পরিচয় শনাক্ত হলেও অশনাক্ত রয়ে গেছে ২০টি। ২০২৪ সালের আগস্টে ৫টি, সেপ্টেম্বরে ৪টি, অক্টোবরে ১টি, নভেম্বরে ৩টি এবং ডিসেম্বরে ২টি লাশ উদ্ধার হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চে উদ্ধার হওয়া ৭টি লাশের সব কয়টির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তবে এপ্রিলে উদ্ধার হওয়া ৩টির মধ্যে ২টি, মে মাসে ৬টির মধ্যে ৪টি, জুনে ৬টির মধ্যে ২টি, জুলাইয়ে ৩টির মধ্যে ১টি এবং আগস্টে ৮টির মধ্যে ৩টি অশনাক্ত থাকে। চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতেই বটিয়াঘাটা কাজীবাছা নদী ও রূপসা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি লাশেরও পরিচয় মেলেনি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নদ-নদীতে লাশ ফেলার প্রবণতা কমাতে নৌ-পুলিশের টহল জোরদার করা, নদীপথে নজরদারি বাড়ানো এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। এ ছাড়া, স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এই সমস্যা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

নৌ-পুলিশ খুলনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের আওতায় রয়েছে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরা জেলার নদ-নদী। এর মধ্যে খুলনার ভৈরব, রূপসা, কাজিবাছা, আঠারবেঁকী ও শিবসা নদী; বাগেরহাটের পশুর ও শ্যালা নদী; পিরোজপুরের সন্ধ্যা, কচা ও বলেশ্বর নদী এবং সাতক্ষীরার নওবেঁকীসহ একাধিক নদী থেকে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 

নৌ-পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ মাস ১ দিনে মোট ৫০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জন পুরুষ, ৭ জন নারী এবং ১১ জন শিশু। লাশগুলোর মধ্যে রূপসা নদী থেকে ৪০ শতাংশ, ভৈরব নদী থেকে ৩০ শতাংশ, পশুর নদী থেকে ২০ শতাংশ এবং অন্যান্য নদী থেকে ১০ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে।

নৌ-পুলিশ সুপার ড. মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, নদ-নদীতে লাশ ফেলা অপরাধীদের কাছে নিরাপদ কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, নৌকা বা ফেরি থেকে পড়ে অথবা গোসল করতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, স্থলভাগে লাশ ফেলার তুলনায় নদীতে ফেললে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়। পানিতে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে লাশের চেহারা বিকৃত হয়, জলজ প্রাণী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শরীরের টিস্যু নষ্ট হয়ে যায়। এতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা অন্যান্য শনাক্তকরণ পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে পড়ে। শুধু ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নির্ণয় সম্ভব হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তিনি বলেন, হত্যার ঘটনা বোঝা গেলে মামলা দায়ের করা হয়। লাশের পরিচয় পাওয়া গেলে স্বজনদের মাধ্যমে মামলা দায়ের হয়, আর পরিচয় না পাওয়া গেলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। অশনাক্ত লাশগুলো আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়।

নৌ-পুলিশ সুপার জানান, ইদানীং উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তদন্তে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগই হত্যাকা-ের শিকার। তিনি বলেন, হত্যার পর লাশ লুকানো কঠিন। নদীতে ফেলে দিলে অপরাধীদের ধরা কঠিন হয়। তিনি আরও জানান, কিছু অপরাধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংঘটিত হলেও হত্যাকা-ে সাধারণত সিন্ডিকেট জড়িত থাকে না। তবে মামলার সঠিক তদন্ত ও আসামিদের বিচার নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পেশাদারির সঙ্গে কাজ করতে হবে। বৈধ-অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি করা প্রয়োজন।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভা ও জনসভায় আমরা বারবার বলছি, খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে অসংখ্য মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে না। তিনি পুলিশের তৎপরতার ঘাটতির কথাও উল্লেখ করেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!