মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ১১:০২ পিএম

প্রান্তিক কৃষকের কাছে সেবা পৌঁছাতে মোটরসাইকেল কেনার উদ্যোগ

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ১১:০২ পিএম

প্রান্তিক কৃষকের কাছে সেবা পৌঁছাতে মোটরসাইকেল কেনার উদ্যোগ

মাঠপর্যায়ে কৃষি কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য ১৫০টি মোটরসাইকেল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই উদ্যোগের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চাওয়া হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য হলে দেশের ২০৮টি উপজেলায় মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকা-ে নতুন গতি আসবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন ‘পুষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য কৃষি ও গ্রামীণ রূপান্তর কর্মসূচির (পার্টনার প্রকল্প)’ আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশের কৃষি শুধু উৎপাদনকেন্দ্রিক নয়, এটি বাজারনির্ভর, প্রযুক্তিনির্ভর এবং তথ্যনির্ভর একটি খাতে রূপ নিচ্ছে। এই পরিবর্তনের ধারা আরও জোরদার করতে প্রয়োজন দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী সরঞ্জাম। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এই ১৫০টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাব কেবল একটি লজিস্টিক সুবিধা নয়, বরং এটি এক ধরনের কৌশলগত বিনিয়োগ, যার মাধ্যমে কৃষকের জীবনমান ও কৃষির গুণগত মানÑ উভয়ের উন্নয়ন ঘটবে। এই প্রস্তাবের দ্রুত অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব মনোভাবেরই প্রতিফলন হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের কৃষি খাত কেবল খাদ্য নিরাপত্তার মূল চালিকা শক্তিই নয়, বরং দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। দেশের কোটি কোটি কৃষকের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই খাতের কাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য কৃষিপণ্য বিপণনে সহায়তা নিশ্চিত করা, উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে কৃষিকে একটি টেকসই ও লাভজনক পেশায় রূপান্তরিত করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি মূলত দেশের কৃষিপণ্যের মূল্যশৃঙ্খলকে (ভ্যালু চেইন) শক্তিশালী করা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে চলবে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন (জিওবি) এবং প্রকল্প ঋণ হিসেবে সংস্থান করা হবে।

সূত্রটি জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের ৬৪টি জেলা ও ২০৮টি উপজেলায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক কৃষকদের বাজার ব্যবস্থাপনা, দামের সঠিকতা, সংরক্ষণ, পরিবহন, বাজার বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন এবং কৃষি পেশাকে লাভজনক করে তুলতে পারেন।

বর্তমানে অধিকাংশ উপজেলায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোতে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই। ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে কৃষকের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না, যা প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছে। এই কারণে মাঠপর্যায়ে সেবা পৌঁছানো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি মোটরসাইকেল কেনা হলে কর্মকর্তারা অল্প সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন, কৃষিপণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ডেটাবেস তৈরি, বাজার সংযোগ ও মূল্য বিশ্লেষণসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সহজে করতে পারবেন।

জানা গেছে, অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী এই ১৫০টি মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য মোট ২ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অর্থ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-২ শাখা থেকে গত ৩ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগের কাছে মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য পূর্বানুমোদন চেয়ে একটি আবেদনপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে মোট ১৫টি সংযুক্তি যুক্ত করে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে মোট ১৫টি যানবাহন; যার মধ্যে রয়েছে ১টি প্রাইভেটকার, ১১টি জিপ, ২টি মাইক্রোবাস এবং ১টি ভিডিও মোবাইল ভ্যান। এই যানবাহনের বেশির ভাগই বিভাগের প্রধান কার্যালয় বা জেলাভিত্তিক কর্মকা-ে ব্যবহৃত হয়। উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের মাঠকর্মীরা প্রায়ই নিজ খরচে যাতায়াত করতে বাধ্য হন, যা প্রকল্পের মান ও গতি দুটোকেই প্রভাবিত করে।

এই প্রকল্পটি তৎকালীন সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা এবং কৃষি বিপণনের রূপকৌশল ২০৩০-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মোটরসাইকেল সরবরাহের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আরও দক্ষতার সঙ্গে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারবেন, যা কৃষি বিপণন ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে সহায়তা করবে।

এ ছাড়াও প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের ফলে দেশে কৃষি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি হবে আরও প্রাণবন্ত ও উৎপাদনশীল।

এই প্রস্তাব ইতোমধ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরে অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদনপ্রাপ্ত হলে দ্রুত ক্রয় কার্যক্রম শুরু করা হবে এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল বিতরণ করা হবে।

এর ফলে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কাজ হবে আরও গতি সম্পন্ন, সময়োপযোগী ও কৃষকবান্ধব। এতে কেবল সরকারি কার্যক্রমের গুণগত মানই বাড়বে না, বরং নীতিগতভাবে প্রান্তিক কৃষকদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নও নিশ্চিত হবে। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!