আজ রোববার থেকে প্রথমবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। ক্লাস শুরুর পূর্বে শিক্ষার্থীদের হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ উপলক্ষে হলগুলোতে চলছে প্রস্তুতি। তবে সাবেক শিক্ষার্থীদের অবস্থানে হলে ‘একজন নবীন শিক্ষার্থীর জন্য একটি আসন’Ñ এই নীতি বাস্তবায়নে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত আসনের ব্যবস্থা করতে হল প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে ।
জানা গেছে, বিগত ১৫ বছর হলগুলোতে আসন খালি থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গণরুম-ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে হল প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণ ব্যর্থ। হলের আসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করত তৎকালীন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়ররা জুনিয়রদের অঘোষিত অভিভাবক ছিল। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাস ও হল থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করায় সিনিয়রদের সেই কর্তৃত্বের অবসান হয়। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি নতুন আবাসিক হলের উদ্বোধন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিলুপ্ত হয় দীর্ঘদিনের গণরুম প্রথা। যার ফলশ্রুতিতে ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের প্রথম দিন থেকেই সম্পূর্ণ আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এই আবাসিক হলগুলোতে কিছুসংখ্যক আসন এখনো ফাঁকা রয়েছে। তবে অনেক সাবেক শিক্ষার্থীও এখনো হলে অবস্থান করছেন। তাই নবীন শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৫৩ আবর্তনের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সময়ে একটি আসনে একজন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থাপনা দেখেছি। তবে এ বছর হলে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থীর বরাদ্দ দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এতে হলে আসন সংকট হতে পারে।
সাবেক শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান ও নবীন শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের বিষয়ে জাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘বিভিন্ন হলে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ আসন খালি রয়েছে, তাতে আবাসন নিয়ে কোনো সংকট হবে না, আর যদি সংকট দেখা দেয় তাহলে সাবেক শিক্ষার্থীদের হল থেকে চলে যাওয়া দরকার বলে মনে করি। এই মুহূর্তে যেহেতু একটি নতুন ব্যাচ ক্যাম্পাসে আসছে, তাদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’
এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, ‘২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ১৮৮৮ জন নবীন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। সাবেক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান না করলে নতুনদের আবাসন সমস্যা হবে না বলে মনে করি।’
শহিদ রফিক-জব্বার হলের প্রোভোস্ট ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এই হলে ৪৬তম আবর্তনের ১০-১৫ জনসহ ৪৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত হল ত্যাগ করছে। হল সংসদে যারা নির্বাচিত হয়েছে, আমরা তাদের সহযোগিতায় সাবেকদের দ্রুত হল ত্যাগের ব্যবস্থা করব।’
প্রোভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবেদা সুলতানা বলেন, ‘হলগুলোতে ৪৬ ও ৪৭তম আবর্তনের যেসব সাবেক শিক্ষার্থী রয়েছে, তাদের সাথে প্রশাসনের এবং উপাচার্যের কথা হয়েছে। তারা কথা দিয়েছে, একজন নবীন শিক্ষার্থীও আসন ছাড়া থাকবে না। ভিসি এই দায়িত্ব নিয়েছেন যে যদি নবীন ব্যাচের কোনো শিক্ষার্থী আসন না পায়, তাহলে তিনি নিজে গিয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করবেন। এ ক্ষেত্রে রুমগুলোতে নতুন শিক্ষার্থীদের আবাসনের সময় যদি সাবেক শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যা তৈরি করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’