আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর জন্য ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজ। ভোটার তালিকাও প্রায় শেষের পথে। নির্বাচনি আচরণ সংশোধন হয়ে গেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের কাজও চলমান। এত সব কিছুর মতো নির্বাচন পরিচালনা কারা করবে, তা নিয়েও ভাবছে ইসি। আগের মতো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের কথা ভাবছে কমিশন। ফলে প্রশাসনের এই কর্মকর্তাদের হাতেই থাকছে ভোটের সর্বময় ক্ষমতা।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নির্বাচন কমিশন কেবল পলিসি নির্ধারণ করে থাকে। বাস্তবায়নের প্রায় পুরো দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকে তাদের। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও সুপারিশ আসতে হয় রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমেই। ফলে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের ওই পদে নিয়োগ করে নির্বাচনকে সরকারের হাত থেকে মুক্ত করার যে দাবি, তা আর বাস্তবায়ন সেই অর্থে হচ্ছে না।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে দুজন বিভাগীয় কমিশনার। বাকি ৬৪ জন জেলা প্রশাসক। ভোটে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছিল ৫৯২ জন। এ ক্ষেত্রে ৪৯৫ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ১৪ জন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আট জন, জোনাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ১১ জন এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন ৫৬ জন।
এ ছাড়া কাস্টমস এক্সিকিউটিভ অফিসার পাঁচজন, সহাকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন দুজন আর সার্কেল অফিসার একজন নিয়োগ করা হয়েছিল। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের গতবারের মতো এবারও রিটার্নিং কর্মকর্তার সহায়ক হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা মহল থেকে ইসি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জোর দাবি উঠেছে। নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকেও এই দাবি তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘বড় জেলায় যেখানে বেশি আসন আছে, সেখানে একাধিক রিটার্নি কর্মকর্তা নিয়োগ করে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এখন ইসির কর্মকর্তারা অনেক অভিজ্ঞ হয়েছেন। অন্তত ১৪-১৫ জনকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা কারা হবেন, এটা নিয়ে কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। তবে সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যদিকে ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য মুদ্রণের কাজে ইতিমধ্যে বিজি প্রেসকে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। আবার বিভিন্ন নির্বাচন উপকরণ কেনাও শেষ করেছে কমিশন। চলছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের কাজ।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটার ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ১৭১ জন। খসড়া ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে ৪২ হাজার ৬১৮টি আর ভোটকক্ষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন