ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

এমআইওবি মুনাফাখোর সিন্ডিকেট

মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি সারা দেশে হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:৪১ এএম

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (এমআইওবি) একটি মুনাফাখোর সিন্ডিকেট হিসেবে আখ্যা দিয়েছে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রয়কারীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক বাস্তবায়িত হতে যাওয়া ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রারে (এনইআইআর) প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় এই সিন্ডিকেট মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজারে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ পাবে বলেও দাবি করে সংগঠনটি। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরই) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা জানান, এমআইওবি বাজার থেকে সাধারণ ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করার সুযোগ পাবে এই ব্যবস্থায়।

এনইআইআর সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি শামীম মোল্লা। তিনি বলেন, এমআইওবির প্রতিষ্ঠানগুলো পাশর্^বর্তী দেশের বাজারের ভ্যাট ও অন্যান্য কর হিসেবে নিলেও তাদের তুলনায় একই হ্যান্ডসেট অতিরিক্ত ১৫ থেকে ২৫ শতাংশে বিক্রি করছে। তার পরেও এমআইওবির সদস্যরা বার্ষিক সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে আসছে। অথচ তাদের কারখানাগুলোতে মাত্র ৫ থেকে ৭ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এ জন্যই তাদের ‘সিন্ডিকেট’ বলছি।

জাতীয় নির্বাচনের আগে এনইআইআর বাস্তবায়ন করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে শামীম মোল্লা আরও বলেন, ‘টেলিকম অর্ডিন্যান্স ২০২৫-এ এনইআইআর নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এটাই প্রমাণ করে যে, ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর বাস্তবায়ন করা সরকারের সমন্বিত কোনো পরিকল্পনার অংশ নয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এটি বাস্তবায়ন করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমাদের মনে হয়। ওই অর্ডিন্যান্সে ইন্টারনেট বন্ধ না করার মাধ্যমে ডিজিটাল স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, অথচ প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে স্মার্টফোন বন্ধে পূর্ণ ক্ষমতা বিটিআরসি ও এমআইওবির হাতে চলে যাবে। এটি ডিজিটাল স্বাধীনতা ও জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থি। এ কারণেই এমআইওবির অর্থায়নে এনইআইআর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ২০ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ২০ লক্ষাধিক মানুষের রুটি-রুটি হুমকির মুখে পড়বে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থে যে মুঠোফোন দেশে আনার সুযোগ পায়, তার বদলে সিন্ডিকেটের বাড়তি আয়ের সুযোগ হবে। এর ফলে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হবেন।’

ক্ষুদ্র ও মাঝারি মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের আয়ের পথ রুদ্ধ না করে এনইআইআর বাস্তবায়নে সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান জানানো হয় সরকার ও বিটিআরসির প্রতি। এ জন্য বিটিআরসির প্রতি বেশ কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরে সংগঠনটি। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ব্র্যান্ডের (সিন্ডিকেটের সদস্যদের) সঙ্গে চুক্তিপত্র সম্পাদন ছাড়াই যথাযথ কর প্রদান সাপেক্ষে হ্যান্ডসেট আমদানির সুযোগ রাখা, বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়া, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাজারে বিদ্যমান আন-অফিসিয়াল হ্যান্ডসেট অবিক্রীত থেকে যাওয়ায় সেগুলোর জন্য বাড়তি সময় দেওয়া, বিক্রি রসিদকে হ্যান্ডসেট নিবন্ধনে বৈধ নথি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং আমদানি শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে আনা অন্যতম।

এদিকে মোবাইল ফোন বিজনেস কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াসকে গভীর রাত ৩টায় নিজ বাসা থেকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক আটকের প্রতিবাদে দেশজুড়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত দেশজুড়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানান সংগঠনের নেতারা। প্রায় অর্ধশত সদস্যের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মোবাইল ফোন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরিফুর রহমান।