রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম বলেছেন, আমার অবস্থান অনেকটা আসামির মতো। নগর পরিকল্পনা ও ভবন নির্মাণে রাজউকের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দায় রয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত, মামলা, জেল-জরিমানা এমনকি ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজউকের অবস্থান এখন জিরো টলারেন্স।
গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘ভবন মালিকদের দায়িত্বশীলতাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল বলেন, ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে কসাইটুলির ত্রুটিপূর্ণ ভবন মালিককে এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এলাকার ভবন মালিকরা তাদের সমস্যা সমাধানে রাজউককে সহযোগিতা করছেন। অবৈধ ভবন নির্মাণকারীদের বিদ্যুতের মিটার জব্দ করা হচ্ছে। এতে সুফল পাওয়া না গেলে মামলা ও ভবন ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
ভবনের নকশা অনুমোদন ও তদারকি দুটোই রাজউক করে থাকে বলে জানিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এই দায়িত্ব অন্য সংস্থাকে দিলে আরো যুক্তিযুক্ত ও কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পে ঝুঁকি রোধে কেবল রাজউক নয়, অন্যান্য সরকারি সংস্থারও দায়িত্ব রয়েছে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, যেসব প্রকৌশলী ও স্থপতি উপযুক্ততা নিশ্চিত না করে ভবনের নকশায় স্বাক্ষর করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোপূর্বে যারা তথ্য গোপন ও জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক প্লট নিয়েছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কেরানীগঞ্জ, বসিলা, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাশয় ভরাট করে যেসব হাউজিং কোম্পানি অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণ করছে তাদের ব্যাপারে রাজউকের অবস্থান কঠোর।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকিপ্রবণ এই দেশে অচিরেই বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। ভূমিকম্প নিয়ে আমাদের আতঙ্ক আছে কিন্তু সচেতনতা নেই। বর্তমান বিল্ডিং কোড সময় উপযোগী নয়। এটি আধুনিকায়ন করতে হবে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় শর্টটাইম এবং লংটাইম রোডম্যাপ করা জরুরি। বিগত সরকারের আমলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরিতে প্রচুর অর্থ খরচ করা হলেও প্রস্তুতিতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ভূমিকম্পের ঝুঁকি রোধে সম্পৃক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গলদ আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই এক্ষেত্রে বড় বাধা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে প্রায় সবাই আমলা। সেখানে কোনো ইঞ্জিনিয়ার বা জিওলোজিস্ট নেই।
তিনি বলেন, রাজউকের আওতাধীন থাকা সত্ত্বেও ভবন নির্মাণে ঢাকার আশপাশে গজিয়ে ওঠা হাউজিং কোম্পানিগুলো বিল্ডিং কোড, নকশার তোয়াক্কা করছে না। কোনোরকম নিয়মনীতি না মেনে ১৫-২০তলা ভবন নির্মাণ করছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রাজউক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অবৈধ ভবন নির্মাণের সঙ্গে রাজউকের কিছু অসাধু কর্মচারী জড়িত। রাজউকের অনিয়ম বন্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। টাকা ছাড়া রাজউকে কোনো কাজ হতো না। তবে বিগত সময়ের দুর্নীতি রাতারাতি সংশোধন করা কঠিন। ভবন মালিকের ক্যাপাসিটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে, ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারকেই প্রথম এগিয়ে আসতে হবে।
সরকার যে রাস্তাঘাট, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, এলিভেটর এক্সপ্রেস নির্মাণসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন তৈরি করছেÑ সেগুলোও ভূমিকম্প সহনশীল হতে হবে। ছায়া সংসদে সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের বিতার্কিকদের পরাজিত করে শহিদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেনÑ অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক মাসুদ করিম, সাংবাদিক সাইদুল ইসলাম ও সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

