শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শেখ আশাফুজ্জামান এফসিএ,

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০১:২৮ এএম

ধৈর্যের অভাব

আমাদের জাতিগত সমস্যা

শেখ আশাফুজ্জামান এফসিএ,

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০১:২৮ এএম

আমাদের জাতিগত সমস্যা

জাতি হিসেবে আমরা ধৈর্য ধরতে পারি না, এই সত্যটি বহুবার নানা ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষত আমাদের রাজনীতি যেন তার উৎকৃষ্ট নিদর্শন।

একটি রাজনৈতিক দল যখন নির্বাচনের মাধ্যমে বা তথাকথিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে, তারা পাঁচ বছরের জন্য সরকার চালাবে এটাই নিয়ম। সেই সরকার তাদের পছন্দমতো সিদ্ধান্ত নেবে, কাজ করবে এতে আপত্তির অবকাশ নেই। প্রশ্ন হলো, বিরোধী দল কেন সে সময়টুকু গঠনমূলক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়? কেন তারা সরকার পতনের জন্য সেই প্রথম দিন থেকেই ষড়যন্ত্র, হরতাল, সহিংসতা আর অপপ্রচারে লিপ্ত হয়?

একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দল সরকারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরকার যেখানেই ভুল করবে, বিরোধী দলকেই হবে সেই আয়না, যেটি সত্য প্রতিফলিত করবে। কিন্তু বাংলাদেশে বিরোধী দল যেন ধৈর্যের দুঃসাহস রাখে না। পরাজয়ের পরদিনই তারা রাজপথে শুধু প্রতিবাদে নয়, দম্ভে।

আমরা কি কোনোদিন এমন একটি রাজনীতি দেখতে পারব, যেখানে বিরোধী দল পাঁচ বছর অপেক্ষা করে, জনগণের পাশে থাকে, সরকারকে ভালো কাজের জন্য উৎসাহ দেয় এবং খারাপ কাজের জবাবদিহির আওতায় আনে?
আমাদের এই ধৈর্যহীনতার সংস্কৃতি শুধু রাজনীতিতে নয়, সমাজজীবনের নানা স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রসঙ্গে একটি পৌরাণিক কাহিনি প্রাসঙ্গিক।

প্রতি রাতে রাজপুত্রের জন্য রাজার রাজপ্রাসাদে নৃত্যানুষ্ঠান হতো। অনুষ্ঠানের রীতি অনুযায়ী, নর্তকী নাচতে নাচতে একসময় রাজপুত্রের সামনে এসে মূর্ছা যাবে, এটাই হচ্ছে প্রতি রাতের আকর্ষণ। এক রাতে অনেক সময় পার হলেও নর্তকী কিছুতেই  রাজপুত্রের সামনে এসে আর মূর্ছা যায় না। রাজপুত্র ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। তখন এক জ্ঞানী বৃদ্ধ মন্ত্রী উঠে এসে বলেন, বৎসল ধৈর্য ধর। রাত এখনো শেষ হয়নি। শেষ প্রহর পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তুমি দেখবে, নর্তকী ঠিকই মূর্ছা যাবে।’ তুমি এই রাজ্যের  আগামী কর্ণধার আর তুমি যদি ধৈর্য হারিয়ে ফেল তা হলে তো রাজ্যের ভবিষ্যৎ অন্ধকার! 

এই ছোট্ট উপাখ্যান যেন আমাদের জন্য এক দর্পণ। রাজনীতি কোনো যুদ্ধ নয়, মতভেদ থাকা সত্ত্বেও একে অপরকে শ্রদ্ধা করা, সময়ের প্রতি আস্থা রাখা, এবং দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করা, এটাই রাজনৈতিক পরিপক্বতা। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে যেন কেবল সহিংসতার পুঁজি করে। এতে না হয় সরকার বদলায়, কিন্তু বদলায় না রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ।

আজ সময় এসেছে রহঃৎড়ংঢ়বপঃরড়হ-এর। আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমন এক সংস্কৃতি দিয়ে যাব যেখানে পরাজয় মানেই হিংসা আর ক্ষমতা মানেই লুণ্ঠন?

আমাদের সমাজে ধৈর্যের অভাব প্রতিটি স্তরে: পরিবারে, স্কুলে, অফিসে, ব্যবসায়ে, সবখানে আমরা শুধু জিততে চাই, কিন্তু অপেক্ষা করতে চাই না। তাই হয়তো আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু সভ্যতা গড়ে উঠছে না।

জাতি হিসেবে আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ধৈর্য, সহনশীলতা ও মূল্যবোধের চর্চা ফিরিয়ে আনা। এই চর্চা শুরু হোক রাজনীতি থেকে, আর ছড়িয়ে পড়ুক সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তরে। তবেই আমরা পাব সত্যিকারের উন্নয়ন, গঠনমূলক বিরোধী দল, এবং পরিপক্ব গণতন্ত্র।

ধৈর্য যখন হারিয়ে যায়, তখন দিশা হারায় পুরো জাতি। আর দিশাহীন জাতির ভবিষ্যৎ কখনোই আলোকিত হতে পারে না। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!